অন্ধকারে সংবাদ সম্মেলন এফবিসিসিআই’র

বিদ্যুৎ বিভ্রাট

বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিংয়ের শিকার এবার ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের শীর্ষ প্ল্যাটফরম ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার মধ্যে প্রায় অন্ধকারে সারতে হয়েছে সংগঠনটির বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলন। শেষ পর্যন্ত শরনাপন্ন হতে হয়েছে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর টিভি ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইটের।

আজ শনিবার (৩ জুন) অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনা ঘটেছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মতিঝিলে এফবিসিসিআইয়ের নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি জসিম উদ্দিন।

এফবিসিসিআইয়ের সংবাদ সম্মেলন চলাকালে দুই দফা বিদ্যুৎ চলে যায়। অনুষ্ঠানটি শুরুর পর প্রথম ৩০ মিনিট বিদ্যুতের আলোতেই বক্তব্য রাখেন। এরপর বিদ্যুৎ চলে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেটর চালু করা হয়। কিন্তু আধাঘণ্টা পর বিদ্যুৎ চলে আসায় আপাতত বিপদ কেটে গেছে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু তখনও কেউ বুঝতে পারেনি যে, আসল বিপদ সামনে। গোল বাধে দ্বিতীয় দফায় বিদ্যুৎ যাওয়ার পর। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও আসছিল না জেনারেটরের বিদ্যুৎ। কারিগরি সমস্যার কারণে চালানো যাচ্ছিল না সংগঠনটির নিজস্ব জেনারেটর। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও বিদ্যুৎ না আসায় শেষ পর্যন্ত টিভি ক্যামেরার ফ্লাশলাইটের আলোয় আবার বক্তব্য শুরু করেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। কিন্তু সব ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইট জ্বালানো সত্ত্বেও হলরুম ছিল প্রায় অন্ধকার।

বিদ্যুতের অভাবে শুধু সম্মেলনক্ষের আলোই নিভে যায়নি। অচল হয়ে যায় এর সবগুলো শীততাপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র। ছিল না কোনো ফ্যান। তাতে বদ্ধ কক্ষটি ভ্যাবসা গরমে অসহনীয় হয়ে উঠে। খোদ এফবিসিসিআই সভাপতি নিজের কোট খুলে ফেলেন। বেশ কয়েকজন পরিচালক সংবাদ সম্মেলন রেখেই হলরুম ছেড়ে চলে যান। সব মিলিয়ে বেশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠে সামগ্রিক পরিবেশ। এ কারণে সেভাবে প্রশ্ন-উত্তর পর্বও চালানো যায়নি।

সংবাদ সম্মেলন এফবিসিআই সভাপতি বলেন, বিশাল এই বাজেট বাস্তবায়নে অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়া অন্যতম। এছাড়া মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতি উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখ এবং রিজার্ভ বাড়ানোও এই বাজেটে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

এসময় দেশীয় শিল্প উৎপাদন সচল রাখতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সময়বদ্ধ পরিকল্পনা ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই। পাশাপাশি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে নজর দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

এদিকে কয়লা সংকটে উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রার। বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা আছে তা দিয়ে ৫ জুন রাত পর্যন্ত কেন্দ্রটির একটি ইউনিট চালিয়ে নেওয়া যাবে। ২০২০ সালের ১৫ মে থেকে পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে প্ল্যান্টটির দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করলেও সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় দীর্ঘদিন একটি ইউনিট অলস বসে ছিল।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়ার পর এবারই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রটি কয়লা সংকটের কারণে পুরোপুরি বন্ধ করতে হচ্ছে।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.