চোখের সুস্থতায় চোখের চাপ কমানোর উপায়

আমাদের দেহের সবগুলো অঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে চোখ এমন একটি অঙ্গ যার দৃষ্টিতে আমরা এই পৃথিবীটা উপভোগ করি।  এক কথায় আমরা যা করি, করবো, করছি সব প্রথমে দেখছি পরে বুজছি পরে করছি। তাই চোখকে আমাদের যত্নে রাখতে হবে। চোখের চাপ কম পরলে চোখ ভাল থাকে তাই চোখে চাপ কমাতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।  খুব বেশি চোখের ব্যবহার চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে জ্বলুনি, ব্যথা ও অস্বস্থির সৃষ্টি হয়।

দীর্ঘ সময় মনোযোগ দিয়ে কাজ করার ফলে এমন সমস্যা দেখা দেয়। অতিমাত্রায় কম্পিটারের স্ক্রিন, বই পড়া বা গাড়ি চালানোর মতো মনোযোগের কাজ চোখে চাপ সৃষ্টি করে।

‘আমেরিকান অপ্টোমেট্রিক আসোসিয়েশন’য়ের তথ্যানুসারে ‘আইস্ট্রেইন’ বা চোখের চাপ সৃষ্টি হওয়ার কয়েকটি লক্ষণ হল-

চোখে ব্যথা, ক্লান্তিভাব, জ্বলুনি, অস্বস্তি হওয়া, শুষ্ক চোখ বা চোখ দিয়ে পানি পোড়া, ঘোলাটে দৃষ্টি, মাথা ব্যথা, ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে ব্যথা। এছাড়াও, আলোক সংবেদনশীলতা, মনযোগ দিতে ও পড়তে অসুবিধা সৃষ্টি, চোখে চোখ রাখতে না পারা ইত্যাদি। চোখের চাপ সৃষ্টি হলে একাধিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। শুষ্ক চোখ, মাথা ব্যথা, চোখে ঘোলা দেখা ইত্যাদি ‘আইস্ট্রেইন’য়ের লক্ষণ। কিছু ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে এর সমাধান করা যায়। তবে চোখে নিয়মিত ও তীব্র ব্যথা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

ভারতের ‘এশিয়ান হসপিটাল ফরিদাবাদ’য়ের চক্ষুবিদ্যা পরামর্শক ডা. সিদ্ধি গোয়েল চোখের ওপর চাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে গোয়েল বলেন, “সাধারণত সহজ ও ঘরোয়া উপায় ‘আইস্ট্রেইন’ চিকিৎসায় সহায়তা করে। দীর্ঘায়ীত এই সমস্যা গুরুতর কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যেহেতু প্রতিটা ক্ষেত্রই আলাদা তাই সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”

আইস্ট্রেইন দূর করার কয়েকটি সাধারণ উপায়

নির্দিষ্ট দূরুত্ব অনুসরণ: ডিজিটাল ডিভাইসে কাজ করার সময় সঠিক দেহভঙ্গি ও ও দূরত্ব মেনে চলা জরুরি। বৈদ্যুতিক যন্ত্রের পর্দা চোখ থেকে কয়েক ফিট দূরে এবং চোখ বরাবর বা তার থেকে কিছুটা ওপরে রাখা জরুরি। ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম মেনে চলা উপকারী।

২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলা: চোখের চাপ কমাতে ২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণ করা জরুরি। এর অর্থ হল প্রতি ২০ মিনিট কাজ করার পর ২০ সেকেন্ডের জন্য স্ক্রিন ২০ ফিট দূরে রাখা। এছাড়াও, চোখের সুস্থতায় কাজে কিছু জিনিসের ভারসাম্য থাকতে পারে যেমন- সারাদিন একটানা স্ক্রিনে কাজ না করে কাজের ফাঁকে বাইরে হাঁটতে যাওয়া।

চোখের ইয়োগা করা: দৃষ্টিতে সহায়ক চোখের পেশির যোগ ব্যায়াম করার মাধ্যমে এগুলোকে সুগঠিত ও সক্রিয় রাখা যায়। এতে চোখে চাপের মাত্রা কমে। চোখের ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে পলক ফেলা, চোখ সংকুচিত ও প্রসারিত করা। এতে চোখে আরাম অনুভূত হয় এবং দৃঢ়তা বাড়ে।

আই ড্রপ ব্যবহার: দীর্ঘসময় গভীরভাবে স্ক্রিন দেখার কারণে চোখের পলক পড়ার মাত্রা কমতে থাকে। চোখের পলক কম পড়লে শুষ্কতা ও জ্বলুনির সৃষ্টি হয়। আই ড্রপ ব্যবহার এই সমস্যার সমাধানে কাজ করে। অন্যদিকে, স্ক্রিনে কাজ করার সময় যতটা সম্ভব বার বার চোখের পলক ফেলতে হবে।

সঠিক আলোক ব্যবস্থা: অপর্যাপ্ত আলো যেমন অতি কম বা বেশি আলো দুটোই চোখে চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়াও খুব বেশি মনোযোগ দিয়ে কিছু পড়ার সময় আলো পেছন থেকে আসা উচিত এবং স্ক্রিনের আলো যতটা সম্ভব পর্যাপ্ত আলোকিত থাকা উচিত।

সঠিক চোখের পর্দা ব্যবহার: চোখে চাপ কমাতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বিশেষ চোখের পর্দা উপকারী। বিশেষ লেন্স, ডিভাইস বা থেরাপি চোখে আরাম দিতে সহায়তা করে। এছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু ‘টিন্ট’ বা ‘কোটিং’ চোখে আরাম দেয়। লেন্স ব্যবহারের মাঝে কিছুটা বিরতি দিতে হবে এতে চোখ আরামে থাকবে।

চোখ বন্ধ করা ও আরাম করা: চোখ খোলা অবস্থায় যদি অনেক বেশি জ্বালাপোড়া করে তাহলে কিছুটা বিশ্রাম দেওয়ার প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা সময় বন্ধ রেখে আরাম দিতে হবে। চোখ বন্ধ করে, চিন্তা শিথিল করা এবং যতটা সম্ভব মনোযোগহীনভাবে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এমন কিছুটা সময় চললে আরাম অনুভূত হবে।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.