রাজধানীতে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়

প্রচণ্ড গরমে অসহ্য হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। তাপদাহ ও তীব্র রোদে জনজীবন হয়ে উঠেছে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। ভীষণ এই অনলবর্ষী রোদ্দুরে এক পশলা বৃষ্টি নেমে এলে স্বস্তির হাওয়া বইবে।  মৌসুমের সর্বোচ্চ (৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলিসিয়াস) তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে ঢাকায়।

এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে বৃষ্টি না হলে, বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় মানুষজন অসুবিধা ও কষ্টে ভোগেন। তখন প্রয়োজন পূরণের জন্য আল্লাহর দরবারে বৃষ্টি কামনা করে দোয়া করা সুন্নত। আরবিতে এটাকে ‘ইসতিসকা’ বা ‘সিক্তকরণের দোয়া’ বলা হয়। আর বৃষ্টি প্রার্থনায় সম্মিলিতভাবে জামাতে দুই রাকাত নামাজও আদায় করা হয়। এটাকে বলা হয় ‘সালাতুল ইসতিসকা’। ইমাম সাহেব কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে রহমতের বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন। মুসল্লিরাও তখন কায়মনোবাক্যে দোয়া-প্রার্থনা করেন।

এ অবস্থায় রাজধানীর আফতাব নগরে বৃষ্টি চেয়ে ইস্তিসকার নামাজ ও বিশেষ দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে আফতাবনগর এল ব্লকের খেলার মাঠে এই নামাজ আদায় করেন আলেম উলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়েখ আহমাদুল্লাহ এ বিশেষ নামাজ ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন।

নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা জানান, প্রচণ্ড গরম। এই গরমে মানুষ অতিষ্ঠ। এই মৌসুমে এমন গরম আগে কখনো দেখিনি। প্রচণ্ড দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন মানুষ। এমন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে ও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনসহ আনুগত্য প্রকাশে এই নামাজ আদায় ও দোয়া মোনাজাত করা হয়। আল্লাহ যেন রহমত নাজিল করেন, এটিই আমাদের উদ্দেশ্য।

এর আগে গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে শায়েখ আহমাদুল্লাহ বলেন, তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশ৷ ওষ্ঠাগত মানুষ ও পশুপাখির জীবন৷ হুমকির মুখে ফল ও ফসল৷ এসময়ে প্রয়োজন রহমতের বৃষ্টি৷ প্রিয়নবি সা. এমন অনাবৃষ্টিতে লোকদেরকে নিয়ে মাঠে বেরিয়ে যেতেন৷ এবং ইস্তিসকা তথা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত আদায় করতেন (বুখারি, মুসলিম)৷

তিনি আরও বলেন, আমরা দেশের সকল ইমাম-খতিব ও দায়িত্বশীলদের প্রতি সালাতুল ইস্তিসকার সুন্নাহ জিন্দা করার বিনীত আহ্বান জানাই৷ আমরাও সালাতুল ইস্তিসকার পরিকল্পনা করছি৷ ইন শা আল্লাহ আগামীকাল (আজ) সকাল ১০টায় আফতাবনগর খেলার মাঠে সালাতুল ইস্তেস্কার আয়োজন করছি আমরা। যাদের সুযোগ আছে অংশগ্রহণ করি। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্মানিত ইমাম-খতিবগনকে ইস্তেস্কার সালাতের আয়োজনের আহবান করছি।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা (বায়ু) মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে (মেঘমালাকে) স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তার মধ্য হতে বৃষ্টিধারা নির্গত হয়। তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা (বৃষ্টি) পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৩৮)

‘ইসতিসকা’র নামাজ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) নামাজের নির্ধারিত স্থানে গিয়ে ইসতেসকার নামাজ পড়লেন। যখন কেবলামুখী হলেন, তখন তিনি তার চাদরটা উল্টিয়ে নিলেন। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ১৯৪৭)

 বস্তুত পাপমোচনের জন্য আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ অন্তরে তওবা-ইস্তেগফার করতে হয়। কেউ অন্যের হক বা মানবাধিকার নষ্ট করলে, তা ফেরত দিয়ে দোয়া করতে হয়।

ছবি: ইঞ্জিনিয়ার আজাদ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.