সোনালী ব্যাংকের বিতর্কিত নীতিমালা বাতিলের দাবি

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে। ব্যাংকটির পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিতর্কিত নীতিমালা বাতিলের দাবি জানিয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে এই সংগঠনটি। সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত।

চিঠিতে বলা হয়, অবিলম্বে বিতর্কিত এই নীতিমালা বাতিল করতে হবে। সকল পর্যায়ের প্রমোশনে টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদেরকে টাকা ফেরত দিতে হবে। এছড়া কোন নির্দিষ্ট গোষ্টীর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে অপরিহার্য পছন্দ রুপে সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য অপরিবর্তনীয় স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ণ করতে হবে। স্থায়ী নীতিমালা প্রণয়ণের পূর্ব পর্যন্ত আগের নীতিমালার ভিত্তিতে পদোন্নতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। একইসঙ্গে বিষয়টি পর্ষদে পাশ করাতে হবে।

এতে বলা হয়, ব্যাংকটির ৮১০ তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অফিসার/সমমান থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার/সমমান পদ পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শূন্য পদের চেয়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে প্রতিটি সম্ভাব্য শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিন জন (১:৩) প্রার্থী নির্বাচনী সাক্ষাতকার/বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য হবেন।’ যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২ এর সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ মেধাতালিকার কর্মীরা পদোন্নতিতো দুরের কথা সাক্ষাতৎকারেও অংশ নিতে পারবেন না।

চিঠিতে সংগঠনটির দাবি, ন্যায়প্রত্যাশী কর্মকর্তারা সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। স্মারকলিপি দেওয়ার সময় চেয়ারম্যান ও এমডির কেউই মেধাবীদের মূল্যায়নের কোন যুক্তিসঙ্গত আশ্বাস দিতে পারেননি। তাদের সাথে দুর্বব্যহার করেছেন ও বিভিন্ন হুমকিমূলক কথা বলেছেন যা শুদ্ধাচারেরসাথে যায় না। স্মারকলিপির বিষয়টি সমাধান না করেই ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে এজিএম থেকে ডিজিএমের নির্বাচনী সাক্ষাতকার। হাজারো ব্যাংকিং সমস্যার সমাধানে কোন মাথাব্যাথা নেই। সকল ফোকাস পদোন্নতি নীতিমালায়।

এতে আরও বলা হয়, একটি মীমাংসিত ইস্যুকে এমনভাবে আলোচনার বিষয়বস্তু বানিয়ে ফেলা হয়েছে যেন এটাই ব্যাংকের একমাত্র সমস্যা। মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতিযোগ্য পদ না থাকার পরও সুপারনিউমেরারী হিসেবে তারা পদোন্নতি পাচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে একাধিক কর্মকর্তাকে সুপারনিউমেরারী হিসেবে পদোন্নতি দেওয়াতে সেখানে কোন সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে পদোন্নতি জটিলতা এড়াতে সোনালী ব্যাংকসহ সকল ব্যাংকে সুপারনিউমেরারী পদোন্নতি বন্ধ থাকবে কেন? মূলত উর্ধ্বতন মহলে দেনদরবার করে যৌক্তিক বিষয়ে সমাধান খোঁজার পরিবর্তে নিচের দিকের কর্মকর্তাদের উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া অনেক সহজ। থার্ড ক্লাস বা ফোর্থ ক্লাস কর্মচারীদের ব্যাংকে সিবিএ করার অধিকার থাকলেও অফিসারদের কোন স্বীকৃত পেশাজীবী সংগঠন বা অফিসার্স ফোরাম নেই। তাই নির্বাহী কর্মকর্তা তথা অফিসারদের ন্যায়সঙ্গত দাবী নিয়ে কেউ আওয়াজ তোলে না।

উল্লেখ্য, মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এরফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য শত শত কর্মী। এতোদিন শূন্যপদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুইজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নুতন আইন চালু হয়েছে ব্যাংকটিতে। পদোন্নতির ভাইভার জন্য শুধু সিনিয়রিটি তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.