ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান সরবরাহের ছাড়পত্র দিলো জার্মানি

ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে জার্মানির ধীর গতি দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ কিন্তু পোল্যান্ডের সরকার ইউক্রেনকে যুদ্ধ বিমান সরবরাহের অনুমতি চাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জার্মান সরকার সম্মতি দিয়ে সেই বদনাম আপাতত ঘোচাতে পারলো৷ সোভিয়েত আমলের ডিজাইনের সেই মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সাবেক পূর্ব জার্মানির অস্ত্রভাণ্ডারের অংশ ছিল বলে সেগুলি হস্তান্তরের আগে বার্লিনের সম্মতি আবশ্যক ছিল৷ ২০০৩ সালে জার্মানি এই বিমানগুলি পোল্যান্ডের হাতে তুলে দিয়েছিল৷

জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিউস তাঁর সরকারের এই দ্রুত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এক বিবৃতির মাধ্যমে বলেন, এতে বোঝা যাচ্ছে জার্মানি কতটা নির্ভরযোগ্য৷ তবে পোল্যান্ডের এই পদক্ষেপের প্রতি সম্মতি জানালেও জার্মানি সরাসরি ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান সরবরাহের প্রশ্নে অবস্থান বদল করছে না বলে তিনি জানিয়েছেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস একাধিকবার সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন৷ আমেরিকাও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করছে না৷

ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দেবার প্রশ্নে পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি এ ক্ষেত্রে বিলম্ব চাইছে না৷ সর্বাধুনিক মার্কিন যুদ্ধবিমান সরবরাহ করতে না পারলেও সোভিয়েত আমলের বিমান সরবরাহের ক্ষেত্রে জাতীয় সরকারের সামনে তেমন কোনো বাধা নেই৷ ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর পক্ষেও বাড়তি প্রশিক্ষণ ছাড়াই সেগুলি কাজে লাগানো সহজ৷ গত মার্চ মাসেই পোল্যান্ড নিজস্ব ভাণ্ডার থেকে ইউক্রেনকে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সরবরাহের ঘোষণা করেছিল৷
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই দুদা সম্প্রতি জানিয়েছেন, এমন আটটি বিমান হস্তান্তর করা হয়েছে৷ আরও ছয়টি বিমান হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে৷ তাঁর এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, পোল্যান্ডের হাতে জার্মানি থেকে পাওয়া প্রায় এক ডজন মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান রয়েছে৷

এর আগে ইউক্রেনকে ব্যাটেল ট্যাংক সরবরাহকে কেন্দ্র করে পোল্যান্ড ও জার্মানির মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছিল৷ জার্মানিতে তৈরি লেওপার্ড ট্যাংক সরবরাহের ক্ষেত্রে জার্মানির সম্মতি পেতে অনেক বিলম্ব হয়েছিল৷ গত জানুয়ারি মাসে জার্মানি অবশেষে ছাড়পত্র দেয়৷ তারপর নিজস্ব ভাণ্ডার থেকেও ১৮টি ব্যাটেল ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বার্লিন৷ তবে তার পূর্বশর্ত হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও ৩১টি অ্যাব্রাম্স ট্যাংক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল৷

পশ্চিমা বিশ্ব থেকে পাওয়া ব্যাটেল ট্যাংক এবং পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়া থেকে পাওয়া যুদ্ধবিমান নিয়ে ইউক্রেন রাশিয়ার দখল করা জমি উদ্ধার করতে অদূর ভবিষ্যতে বড় সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি তাঁর ভিডিও বার্তায় দেশের প্রতিরক্ষা শিল্প জগতের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, যুদ্ধ চলাকালীন সব সাফল্য প্রকাশ্যে তুলে ধরা সম্ভব নয়৷ তবে এক বছর আগে ইউক্রেনে তৈরি নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ‘মস্কভা’ রণতরী ডোবানোর ঘটনা স্মরণ করে জেলেনস্কি সন্তোষ প্রকাশ করেন৷ তিনি গোটা রাষ্ট্র ও সমাজের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, ডিপিএ, এএফপি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.