ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে ব্লাস্ট পরিবার গভীরভাবে শোকাহত

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অকাল মৃত্যুতে ব্লাস্ট পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। চিকিৎসা  ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান বন্ধে ব্লাস্টের দায়ের করা জনস্বার্থ  বিষয়ক মামলা এবং সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরী চিকিৎসা সেবা মামলায়  সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরণের তথ্য উপাত্ত ও অভিজ্ঞতা সরবরাহ করে ডঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী  ও  গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা নির্যাতনের শিকার এবং ব্লাস্টের ইন্টার্ণ ভুক্তভোগী লিমন হোসেনকে গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যয়নের সুযোগ করে দিয়েছিলেনে এবং বর্তমানে লিমন হোসেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শুধু স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রেই নয় বরং স্বাস্থ্য সেবা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় ভুক্তভোগীর অধিকার রক্ষায় তাঁর অবিরাম প্রচেষ্টা  ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্কুলজীবন শেষ করে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে এমবিবিএস পাস করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য  বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি  ১৯৭২ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব এই ধারণাটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৭৫ সালে বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট এ প্রবন্ধ আকারে প্রকাশিত হয়।  জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি দেশকে ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করে, ওই নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন। বৈশ্বিকভাবে বিকল্প স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

তিনি তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বা সম্মাননা পেয়েছেন। ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে ফিলিপাইনের র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ১৯৯২ সালে সুইডেন  রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড, কানাডার ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ন্যাচারাল মেডিসিন এর ২০০৯ সালে ডক্টর অব হিউম্যানিটেরিয়ান উপাধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে থেকে ২০১০ সালে  ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ অ্যাওয়ার্ড।

আমরা তাঁর আত্নার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আন্তরিক সমবেদনা  জানাচ্ছি।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.