যুক্তরাষ্ট্রের আনুগত্যের বদলে ইউরোপের ‘সার্বভৌমত্বের’ ডাক মাক্রোঁর

গত কয়েক দিনে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ চীন সফর শেষে দেশে ফেরার সময় তিনি দু-দুটি সাক্ষাৎকারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের বদলে ইউরোপের ‘কৌশলগত সার্বভৌমত্ব’-এর উপর জোর দিয়েছেন৷ তাইওয়ান প্রশ্নে ইউরোপের নরম অবস্থানেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট৷

মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে এক ভাষণে ইউরোপের ভবিষ্যতের সেই একই রূপরেখা তুলে ধরেন মাক্রোঁ৷

এমানুয়েল মাক্রোঁ বলেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, নিজস্ব পরিচয় বজায় রাখতে হলে ইউরোপকে বাইরের জগতের উপর নির্ভরতা কমাতেই হবে৷ অর্থাৎ নিজস্ব স্বার্থ অনুযায়ী সহযোগী বাছাই এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদেরই বেছে নেওয়ার পথে এগোতে হবে বলে তিনি মনে করেন৷ মাক্রোঁর মতে, শুধু বর্তমান বিশ্বের নাটকীয় বিবর্তনের সাক্ষী হয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না৷ একমাত্র খোলা মনে সহযোগিতার মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব৷

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যেভাবে চীন, তাইওয়ান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্কের নতুন রসায়নের প্রস্তাব দিয়েছেন, তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে৷ বিশেষ করে চীনের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়ে তিনি প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ আমেরিকা ও চীনের পাশাপাশি ইউরোপকে তৃতীয় পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নও আলোড়ন সৃষ্টি করছে৷ পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাটেউশ মোরাভিয়েৎস্কি বলেন, আমেরিকার সঙ্গে সহযোগিতা ইউরোপের নিরাপত্তার ‘দৃঢ় ভিত্তি’৷ আমেরিকা ও জার্মানিসহ অন্যান্য দেশেও মাক্রোঁর বক্তব্যের সমালোচনা শোনা গেছে৷

মঙ্গলবারের ভাষণে মাক্রোঁ ইউরোপের আরও শক্তিশালী শিল্প নীতির প্রস্তাব দিয়েছেন৷ ইউরোপেই উৎপাদন বাড়িয়ে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের উপর বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নির্ভরতা কমানোর উপর জোর দিয়েছেন তিনি৷ মাক্রোঁর মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সেই পথেই চলেছে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে ইউরোপ জ্বালানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা যেভাবে প্রায় মুক্ত হতে পেরেছে, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সেই পথে অগ্রসর হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট৷ তাঁর মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ সম্ভবত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ের সূত্রপাত ঘটিয়েছে৷

মঙ্গলবারের ভাষণের মাঝেই প্রতিবাদের মুখে পড়েন মাক্রোঁ৷ বিক্ষোভকারীরা ব্যানার হাতে চিৎকার করে প্রশ্ন তোলেন, ‘ফরাসি গণতন্ত্র কোথায়?’ উল্লেখ্য, অবসর ভাতা কাঠামোর সংস্কারকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সে সম্প্রতি প্রবল প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন মাক্রোঁ৷ দ্য হেগ শহরে ভাষণের সময়েও তাঁকে ‘হিংসা ও দ্বিচারিতার প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে সমালোচনা শুনতে হয়েছে৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, ডিপিএ, এএফপি

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.