২০২৩-২৪ জাতীয় বাজেটের উপর প্রাক-বাজেট আলোচনা

দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর নীলক্ষেত রুহুল কুদ্দুস মিলনায়তনে বিকাল ৩.৩০ এ জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ এর উপর একটি প্রাক-বাজেট আলোচনার আয়োজন করে।

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।

উক্ত অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য (কর) রঞ্জন কুমার ভৌমিক এফসিএমএ “আয়কর প্রস্তাব” র উপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং আইসিএমএবি’র সচিব মোঃ কাউসার আলম এফসিএমএ “কাস্টমস এবং ভ্যাট প্রস্তাবনা” র উপর একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা; ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র নির্বাহী পরিচালক টি.আই.এম. নুরুল কবির এবং ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের (এফই) সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ উপস্থিত ছিলেন।

এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুর রহমান খান এফসিএমএ । খান বলেন, বাংলাদেশকে শিল্পোন্নত, উন্নত ও স্মার্ট জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে জাতির পিতা এবং শেখ হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংগতি রেখে আইসিএমএবি’র ভিশন নির্ধারণ করা হয়েছে।

আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট আরো জানিয়েছেন যে, জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ প্রণয়নে আইসিএমএবি ৬২টি প্রস্তাব সম্বলিত একটি প্রস্তাবনা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রেরণ করেছে। উক্ত প্রস্তাবের বেশির ভাগই ছিল কর রাজস্ব বৃদ্ধি সম্পর্কে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং অনুগত করদাতাদের অপ্রয়োজনীয় হয়রানি দূর করার জন্য রাজস্ব ঝুঁকি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের মাধ্যমে ট্যাক্স রিটার্নের অডিট সম্পন্ন করা সমীচীন বলে আইসিএমএবি পরামর্শ দিয়েছে।

আইসিএমএবি বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইন ও প্রবিধানগুলিকে দূর করে আয়করের মৌলিক দর্শন পুনরুদ্ধারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে, যা বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থার মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে। আইসিএমএবি লোকসানের সময়কালে অনুগত করদাতাদের দ্বারা প্রদত্ত ন্যূনতম করকে ভবিষ্যতে মুনাফা অর্জনের বছরগুলিতে প্রদেয় করের বিপরীতে ট্যাক্স ক্রেডিট হিসাবে অনুমতি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

রঞ্জন কুমার ভৌমিক এফসিএমএ এবং মোঃ কাউসার আলম এফসিএমএ তাদের প্রবন্ধে ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সের উন্নতি, কর আওতা সম্প্রসারণ এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য আয়কর আইন এবং ভ্যাট আইন সংশোধনের পরামর্শ দেন।

আলোচকরা কর আওতা বৃদ্ধির জন্য ডিজিটালাইজেশন এবং যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের উপর জোর দিয়েছেন। তারা বলেছেন, কোভিড এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে যা আমাদেরকেও ভবিষ্যতে প্রভাবিত করতে পারে। তাই উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে বিচক্ষণতার সঙ্গে সংকট মোকাবেলা করতে হবে। তারা আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় খুবই কম এবং এ ক্ষেত্রে তারা নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ জরুরি বলে মনে করেন। তারা আরো বলেন যে বর্তমান মুদ্রা বিনিময় হারের সঠিক ব্যবস্থাপনাও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্বেগের ক্ষেত্র।

প্রধান অতিথি শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে, সরকারি বাজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় প্রথমে বাজেট ব্যয়ের আকার নির্ধারণ করা হয়, তারপর বহুমুখী অর্থনৈতিক, আর্থিক এবং আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে অর্থায়নের সুরাহা করা হয়। তিনি বলেন বাজেটের আকার নির্ধারণে সামষ্টিক-অর্থনৈতিক কারণ, রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতির মতো ক্রস-কাটিং বিষয়গুলি নীতিনির্ধারকদের বিবেচনা করতে হবে। কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিদেশী এবং স্থানীয় বিনিয়োগ আকর্ষণ বনাম কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। তা সত্ত্বেও, এনবিআরের পুরো ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজড করে কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে যার মাধ্যমে রাজস্ব কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সততা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে বলে প্রধান অতিথি গুরুত্বারোপ করেন।

সকল বক্তা সর্বসম্মতিক্রমে এনবিআর’র সামগ্রিক কর ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বিস্তৃত, সমন্বিত এবং ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ার সুপারিশ করেন যাতে করদাতাদের সমস্যাগুলি হ্রাস পায়।

আইসিএমএবি’র সাবেক প্রসিডেন্ট এবং চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম এফসিএমএ সেমিনার ও কনফারেন্স কমিটি উক্ত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সভায় আইসিএমএবি’র কোষাধ্যক্ষ মোঃ আখতারুজ্জামান এফসিএমএ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আইসিএমএবি’র প্রাক্তন প্রসিডেন্ট ও কাউন্সিল মেম্বার আরিফ খান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। সরাসরি এবং ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে পাঁচশতাধিক আইসিএমএবি’র সদস্য এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.