বিসিএমএ’র আলোচনা: সিমেন্ট শিল্পে সংকট বাড়ছে

দেশের সিমেন্ট শিল্প নানা সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকট, ঋণপত্র খোলায় জটিলতাসহ নানা সমস্যায় এই শিল্পের অবস্থা বেশ নাজুক। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা।

সিমেন্ট শিল্পের বর্তমান সংকট এবং যথাযথ উত্তরণের উপায় সংক্রান্ত এক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমএ) নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন। বিসিএমএর উদ্যোগে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিসিএমএ’র প্রেসিডেন্ট আলমগীর কবির। সভায় সিমেন্ট শিল্পের শীর্ষ উদ্যোক্তরা অংশগ্রহণ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রকাশ করেন।

সভায় উদ্যোক্তারা বলেন, পুঁজিঘন সিমেন্ট শিল্পে বর্তমানে চরম সংকট বিরাজ করছে। একদিকে রয়েছে কাঁচামালের আমদানি মূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকট, ঋণপত্র (Letter of Credit-L/C) খুলতে জটিলতা, ডিজেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধি। অপরদিকে সিমেন্ট ব্যবহারের শীর্ষ সময়ে (Peak Session) এ সিমেন্টের চাহিদা হ্রাস হওয়া, সিমেন্টের উৎপাদনকারীদের জন্য বাড়তি উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দীর্ঘদিন যাবৎ সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা লক্ষ্য করছেন, প্রতি বছর মার্চ মাসে সিমেন্ট ব্যবহারের পরিমাণ বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ হয়। কিন্তু গত মার্চ’২০২৩ মাসে সিমেন্টর চাহিদা পূর্ববর্তী বছরের অর্থাৎ ২০২২সালের মার্চ মাসের তুলনায় প্রায় ১৪% হ্রাস পায়। সিমেন্ট শিল্পের এই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি বিরল। এই আকষ্মিক চাহিদা হ্রাসের অন্যতম কারণ হলো, সরকার নিয়ন্ত্রিত অতি বৃহৎ প্রকল্পে (Mega Project) বিলম্বিত হওয়া এবং বেসরকারী খাতে নির্মাণ কাজ হ্রাস পাওয়া।

তাছাড়াও সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল অর্থাৎ ক্লিংকার, স্লাগ, লাইমষ্টোন, ফ্লাই এ্যাশ এবং জিপসাম এর আমদানি মূল্য হঠাৎ করে বেড়ে যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে সমুদ্র পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির কারণে, আমদানী মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সিমেন্ট শিল্পের বর্তমান প্রতিবন্ধকতার আরও একটি অন্যতম কারণ ডলারের সংকট। সিমেন্ট শিল্প মালিকরা অনেক ব্যাংকের কাছ থেকে কাঙ্খিত সহায়তা অনেক ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন না। সরকার উন্নয়নের স্বার্থে এই খাতকে ‘প্রয়োজনীয় খাত’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ব্যাংকসমূহকে যথাযথ নির্দেশনা দিলে, সিমেন্ট শিল্পের এই তীব্র সংকট উত্তরনে সহায়ক হবে।

সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারের নিকট দাবী জানিয়ে আসছে, সিমেন্ট শিল্পের নিকট হতে অগ্রিম আয়কর (Advance Income Tax-AIT) আমদানি পর্যায় ও বিক্রয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ ০.৫০% ধার্য করা এবং AIT কে সমন্বয় যোগ্য (Adjustable) হিসেবে বিবেচনা করা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এই ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

তাছাড়াও, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধির কারণে সিমেন্ট শিল্পের সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.