বাসায় বাঙ্কার চাইছেন ইউরোপের বিত্তবান মানুষ

যুদ্ধ ও মহামারির মতো সংকট আজ আর শুধু ইতিহাসের পাতায় সীমিত নেই৷ ইউরোপের মানুষ বাস্তব জীবনেই সেই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি৷ পোল্যান্ডের এক কোম্পানি বিত্তবান মানুষের নিরাপত্তার অভিনব ব্যবস্থা করছে৷

ডাভিড রিবিকি পোল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলে এক পারিবারিক ব্যবসা চালান৷ ফেরোপ্লাস্ট কোম্পানির কারখানায় ৩০০ শ্রমিক ধাতু শিল্পের জন্য যন্ত্রাংশ তৈরি করেন৷ বিশেষ করে গাড়ি শিল্পখাত এই কোম্পানির অন্যতম প্রধান গ্রাহক৷ কিন্তু সম্প্রতি এই কোম্পানি বাংকার ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ থেকে সুরক্ষার শেল্টার তৈরির কাজ শুরু করেছে৷ একটি সিঁড়ি দিয়ে ভবিষ্যতে মাটির নীচে বাঙ্কারে নেমে যাওয়া যাবে৷ আজ সেই বাংকারের সামনের দরজা তৈরি হচ্ছে৷

নিজের কারখানা ঘুরিয়ে দেখানোর সময় ডাভিড বলেন, ‘এই মুহূর্তে ওয়েল্ডার বুলেটপ্রুফ এআর ইস্পাত দিয়ে শেল্টারের স্টিল হ্যাচ ওয়েল্ডিং করছেন৷ ভেতরেও বাড়তি তালা রয়েছে৷ মোট ছ’টি তালা থাকায় বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না৷ পরিবারের সঙ্গে এখানে লুকিয়ে থাকা যায়৷ ওয়েল্ডিংয়ের কোনো প্রয়োজন নেই৷ ট্রাকে করে তুলে এনে কংক্রিটের খাঁজে নামিয়ে দেড় মিটার মাটি চাপা দিলেই হবে৷’

গ্রাহকের বাড়ির পেছনে ফলআউট শেলটার তৈরি করা হয়েছে৷ সেই প্রণালীর মধ্যে আপৎকালীন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে এক ডিজেল জেনারেটর রয়েছে৷ বাতাস নির্মল রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে৷ ডাভিড রুবিকি বলেন, বাইরে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটলে এই প্রণালী গামা রশ্মির প্রতিটি রেডিয়েশন পার্টিকেল বা কণা ফিল্টার করে৷ শেল্টারের মধ্যে বাতাস চালান করা হয়৷ একেবারেই কোনো বিদ্যুৎ না থাকলে হাতে করে বিদ্যুৎ সৃষ্টির উপায়ও রয়েছে৷

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে প্রতি ঘণ্টায় ২০ মিনিট ধরে হ্যান্ড ক্র্যাংক ঘোরালে তাজা বাতাস প্রবেশ করবে৷ বিলাসবহুল এই ফলআউট শেলটারে আট জন পর্যন্ত মানুষ ভালোভাবেই বাস করতে পারেন৷ শোবার জায়গা, বাথরুম, রান্নাঘর ও বসার ঘরও রয়েছে৷ এমন সুরক্ষার মূল্য সাড়ে তিন থেকে ছয় লাখ ইউরো হতে পারে৷

কিন্তু ক্রেতারা কেন এমন বাংকার তৈরি করাতে চান? ফেরোপ্লাস্ট কোম্পানির কর্ণধার রুবিকি এমন চাহিদা ব্যাখ্যা করে বলেন, দুই বছর আগে আমরা কোভিডের মুখে পড়েছিলাম৷ এখন যুদ্ধ চলছে৷ কেউ ভাবেনি, যে ইউরোপে যুদ্ধ হবে৷ কিন্তু এখন সেটাই ঘটছে৷ চীন ও তাইওয়ান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত রয়েছে৷ এখন মিডিয়ায় শুনছি যে খাদ্য সংকট আসছে৷ পানির সংকট৷ কেউ জানে না কী ঘটতে চলেছে৷ তাই নিরাপদ বোধ করতে হলে আমরা সেই সমাধানসূত্র দিচ্ছি৷

ডাভিড রিবিকি আমেরিকার ক্রেতা ও জার্মান ডিসট্রিবিউটারদের জন্য বাংকার তৈরি করেন৷ যেমন বার্লিন-ভিত্তিক বিএসএসডি কোম্পানি তাঁর গ্রাহক৷ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে৷ বিএসএসডি কোম্পানির মার্ক শ্মিশেন বলেন, ‘আমাদের ওয়েবসাইটের ভিজিটের সংখ্যা দেখেও সেটা টের পেয়েছি৷ আগে দিনে প্রায় ১০০ ভিজিটার আসতো৷ আচমকা সেটা বেড়ে ১০,০০০ হয়ে উঠলো৷ ভাবতেই পারছেন এর কত বড় সম্ভাবনা রয়েছে৷ তখন আমরা ভাবলাম, যুদ্ধ হয়তো অনেকদিন ধরে চলবে৷ তারপর শেষ হবে৷ ফলে আগ্রহও কমে যাবে৷ কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীতটাই ঘটলো৷’

এই কোম্পানি বিভিন্ন মাপের বাংকার তৈরি করে৷ যেমন ছোট প্যানিক রুমের মূল্য ১৫,০০০ ইউরো৷ সেটির বৈশিষট্য সম্পর্কে ডাভিড রুবিকি বলেন, ‘এই ঘরে মাত্র আধ ঘণ্টা কাটানো যায়৷ সে কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে পুলিস অ্যালার্মও রয়েছে৷ কিছু ঘটলে আপনি পরিবারসহ সেখানে আবদ্ধ হয়ে বোতাম টিপে শুধু অপেক্ষা করতে পারেন৷’

শ্রমিকরা এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি বাঙ্কার তৈরি করছেন৷ ইউরোপের বিত্তবান ব্যক্তিরা নিজেদের বাসার নীচে শেলটার চেয়ে কোম্পানির কাছে অর্ডার দিয়েছেন৷ ডিডাব্লিউ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.