দুপুরে কারাগারে, বিকেলে জামিন মাহির

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পর বিশেষ বিবেচনায় জামিন পেয়েছেন। তার অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি আদালত বিবেচনায় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

শনিবার (১৮ মার্চ) বিকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫ এর বিচারক মো. ইকবাল হোসেনের আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। একই আদালত তাকে দুপুরে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জামিন শুনানিতে মাহিয়া মাহির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আনোয়ার সাদাত, অ্যাডভোকেট রিপন চন্দ্র সরকার এবং অ্যাডভোকেট নবীজুল ইসলাম অ্যাডভোকেট আনোয়ার সাদাত জানান, তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটি মামলাতেই জামিন মঞ্জুর হয়েছে। তার মক্কেল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই মামলা হওয়ার পরও দেশে চলে এসেছেন।

এর আগে দুপুরে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। পরে মাহিকে গাজীপুর জেলা কারাগারে নেওয়া হয়।

শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাহিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বলেন, মাহি দেশের ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকী প্রক্রিয়া শেষে আমরা দ্রুতই তাঁর রিমান্ড চাইব। মাহির স্বামী রকিব সরকার এখনও পলাতক।

সাংবাদিকদের পক্ষে মাহি অন্তসত্বা জানানো হলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমরা এই বিষয়ে অবগত নই; সেটা কোর্ট দেখবেন।

এদিকে মাহি স্বামী রকিব সরকারের সঙ্গে ওমরাহ হজ পালনের জন্য সৌদি আরব গিয়েছিলেন। মাহির সঙ্গে দেশে ফেরেননি রকিব। তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোরে স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালনরত মাহি সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে ফেসবুক লাইভে রকিবের গাড়ির শো-রুম ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেন। এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার স্বামীর একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। সেখানে দুর্বৃত্তরা হামলা করেছে। তারা শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে আসবাব, দরজা-জানালা, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করেছে। শোরুমের সাইনবোর্ড খুলে ফেলেছে। অফিসকক্ষ তছনছ করে টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে গেছে।

ইসমাইল হোসেন ওরফে লাদেন ও মামুন সরকার নামে দুজনের নেতৃত্বে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মাহি। এ সময় ফেসবুকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন মাহি।

এ বিষয়ে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি (মাহি) মিথ্যা বলে মানুষের সহানুভূতি নিতে চাচ্ছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করে তিনি পুলিশকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছেন। অথচ মাহী বা তার স্বামী জমিজমা-সংক্রান্ত কোনও বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেননি। শুক্রবার যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদেরও আমরা চিনি না। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার ভোরে বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুপক্ষই পালিয়ে যায়। তাদের জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ইসমাইল হোসেনসহ তার পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে আহত ইসমাইল বাদী হয়ে ২৮ জনের বিরুদ্ধে বাসন থানায় একটি মামলা করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।

মাহীর ফেসবুক লাইভের পর সংবাদ সম্মেলন করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, রকিব সরকার তার প্রায় সোয়া ১১ শতাংশ জমি দখল করে গাড়ির শো-রুম করেছেন।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.