আইসিএসবি’র সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা শীর্ষক সেমিনার

ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারীজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) “বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) বিধিমালা, ২০২২”এবং এক্সিট পরিকল্পনা (ডিলিস্টিং পদ্ধতি) শীর্ষক আয়োজন করে।

আয়োজনটি শনিবার (১ মার্চ) আইসিএসবি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ এফসিএস, প্রেসিডেন্ট, আইসিএসবি এবং নির্বাহী পরিচালক, কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড গ্রুপ কোম্পানি সেক্রেটারি, বেক্সিমকো গ্রুপ অব কোম্পানিজ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এম নুরুল আলম এফসিএস, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, আইসিএসবি এবং চেয়ারম্যান, সেমিনার ও কনফারেন্স সাব কমিটি, আইসিএসবি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। এম নুরুল আলম এফসিএস স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং সেমিনারে যোগদানের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক, বিএসইসি সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা, ২০২২ এর উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বিধিমালার বিভিন্ন দিক যেমন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) এবং এর সংরক্ষণ, অভ্যন্তরীণ তথ্য এবং তাদের সংজ্ঞা, বস্তুগত তথ্য প্রকাশের নীতি, অভ্যন্তরীণ ব্যবসায় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বস্তুগত তথ্য এবং মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহের পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিসনারদের জন্য নিম্নলিখিত চ্যালেঞ্জগুলিও উল্লেখ করেছেন:

  • উপাদান তথ্য এবং মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের নীতিমালার কাঠামো ডিজাইন করা;
  • অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি এবং তাদের সম্পর্ক সনাক্তকরণ;
  • ৩ বছর পর্যন্ত ডাটাবেস সংরক্ষণ;
  • তৃতীয় পক্ষের পর্যালোচনা/পরিসেবার প্রয়োজন হতে পারে কারণ এখানে বিশাল বিচারমূলক সমস্যা জড়িত;
  • স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইট এবং তথ্য জমা দেওয়ার সিস্টেমের মাধ্যমে প্রচার; এবং
  • নিয়ন্ত্রক সংক্রান্ত ইস্যু

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক মোঃ রবিউল ইসলাম, সহকারী মহাব্যবস্থাপক, লিস্টিং এফেয়ারস বিভাগ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লিমিটেড “এক্সিট পরিকল্পনা (ডিলিস্টিং প্রসিডিউর)” এর উপর আরেকটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বিস্তারিতভাবে ডিলিসট করার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন, যেমন, প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করা, প্রস্তাবকারী এবং কনসার্ট পার্টির চুক্তি, কনসেন্ট ইন প্রিন্সিপাল’র  জন্য বিএসইসি-তে আবেদন করা, কাট-অফ-ডেট নির্ধারণ, স্টক এক্সচেঞ্জের সাথে চুক্তি, অফারের মূল্য নির্ধারণ, পাবলিক ঘোষণা, সিকিউরিটিজ হোল্ডারদের মিটিং, অফার লেটার, এসক্রো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সিকিউরিটিজের নিষ্পত্তি, এক্সচেঞ্জ এবং আবেদনকারীর দ্বারা যৌথভাবে বিএসইসিকে রিপোর্ট, বিএসইসির চূড়ান্ত ঘোষণা এবং যারা গ্রহণ করেননি তাদের নিষ্পত্তির পদ্ধতি অফার।

মুহাম্মদ হাসানুর রহমান রাকিব এফসিএস, জেনারেল ম্যানেজার, বোর্ড অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স, কর্পোরেট গভারনেন্স ডিভিশন, গ্রামীণফোন লিমিটেড সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা, ২০২২ প্রবর্তনের জন্য বিএসইসি কমিশনকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রয়োজন। তিনি বিএসইসি কমিশনকে সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা, ২০২২’র একটি ইংরেজি সংস্করণ তৈরি করার জন্যও আহ্বান জানান। তিনি আইসিএসবি’র সেমিনার ও কনফারেন্স সাব কমিটিকে এমন একটি সময় উপযোগী সেমিনার আয়োজনের জন্যও ধন্যবাদ জানান।

তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী এসিএস, কোম্পানি সেক্রেটারি, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড বলেন যে, কিছু ক্ষেত্রে কে ডিফল্টার, ব্যক্তি না প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। এছাড়া একাধিক নিয়ন্ত্রকের উপস্থিতিও আরেকটি চ্যালেঞ্জ। তিনি বিএসইসিকে বস্তুগত তথ্যের সংজ্ঞা আরও স্পষ্ট করার জন্য এবং শুধুমাত্র ওয়েবসাইটে তথ্য আপলোড করার বিধান রাখার জন্য অনুরোধ করেন। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিরও আহ্বান জানান তিনি।

আলোচনাকালে, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এফসিএস, কাউন্সিল সদস্য, আইসিএসবি এবং ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লিমিটেড মূল প্রবন্ধ উপস্থাপকদের প্রাণবন্ত এবং তথ্যপূর্ণ উপস্থাপনার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা, ২০২২ এবং এক্সিট পরিকল্পনা (ডিলিস্টিং পদ্ধতি) সম্পর্কে  পরিচালকদের এবং প্রাসঙ্গিক স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির উপর জোর দেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ এফসিএস, আইসিএসবি’র প্রেসিডেন্ট বলেন যে, এই ধরনের সেমিনারের মাধ্যমে ইনস্টিটিউটের সদস্যগণ সাম্প্রতিক পরিবর্তনসমূহ সম্পর্কে হালনাগাদ জ্ঞান অর্জন করতে পেরে উপকৃত হন। তিনি কর্পোরেট গভর্নেন্স কোডে বাধ্যতামূলক সেক্রেটারিয়াল অডিট যুক্ত করার জন্য বিএসইসিকে অনুরোধ জানান। তিনি ডিলিস্টিং প্রক্রিয়া সহজ করার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বিএসইসিকে সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ বিধিমালা, ২০২২ এবং এক্সিট পরিকল্পনা (ডিলিস্টিং পদ্ধতি) সম্পর্কে সকলকে জানানোর জন্য প্রশিক্ষন কর্মশালা আয়োজনের অনুরোধ করেন এবং সকল কোম্পানির পরিচালকদের প্রশিক্ষন কর্মশালায় যোগদান করা বাধ্যতামূলক করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি কোম্পানি সচিবকে পাঁচজন “প্রধান নির্বাহী’র একজন হিসেবে রাখার জন্য বিএসইসিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি স্বচ্ছতা আনতে পিরিওডিকাল সেক্রেটারিয়াল অডিট চালু করারও অনুরোধ জানান। তিনি আইসিএসবি থেকে বিএসইসিকে সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে আইসিএসবি’র বিপুল সংখ্যক সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বের পর একটি ইন্টারেক্টিভ প্রশ্নোত্তর পর্ব হয়েছিল যেখানে, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক, প্রধান অতিথি ও সেশন চেয়ারম্যান অংশগ্রহণকারীদের উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

এসকে. মোঃ সরফরাজ হোসেন এসিএস, সদস্য সচিব, সেমিনার ও কনফারেন্স সাব কমিটি অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এবং পরিশেষে ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

অর্থসূচক/ এইচএআই

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.