ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে ভারতে কূটনৈতিক সংঘাত

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রাশিয়া মরিয়া হয়ে বাখমুত শহর দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ জোরালো আক্রমণের মুখেও ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এখনো প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে৷ তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেই চাপ সহ্য করা সম্ভব হবে কিনা, সে বিষয়ে ইউক্রেনের মধ্যেই সংশয় দেখা দিচ্ছে৷ এদিকে গত প্রায় সাত মাস ধরে বাখমুত শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্য সংঘাত চলছে৷

দেশটির সংসদ সদস্য স্যারহি রাখমানিন বলেন, আপাতত রুশ বাহিনীর যতটা সম্ভব ক্ষতি করাই লক্ষ্য৷ তার মতে, হয় সংগঠিতভাবে পিছিয়ে আসতে হবে, অথবা সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তার সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিটি সেক্টরের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে চলেছে৷

যুদ্ধক্ষেত্রের পাশাপাশি কূটনৈতিক মঞ্চেও ইউক্রেন প্রাধান্য পাচ্ছে৷ ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে জি-২০ দেশগুলির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের প্রাক্কালে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা জোসেপ বরেল বলেন, এই রাষ্ট্রজোট ইউক্রেন সংকটের অবসান ঘটাতে কী করতে পারে, তার উপর সম্মেলনের সাফল্য নির্ভর করবে৷ তবে এই যুদ্ধ যে শেষ করতে হবে, ভারত রাশিয়াকে তা বোঝাতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার জি-২০ গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে ইউক্রেন নিয়ে মতবিরোধ দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা স্পষ্ট দেখিয়ে দিচ্ছে, যে ‘গ্লোবাল গভর্নেন্স’ বা বৈশ্বিক শাসন ব্যর্থ হয়েছে৷ আর্থিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি, সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধ সেই ব্যর্থতা তুলে ধরেছে৷ মোদীর মতে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্তরে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে৷ সেই উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে প্রত্যেকের নিজস্ব অবস্থান ও দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে৷ তবে শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে জি-টোয়েন্টি সদস্যদের বাকিদের কথাও ভাবা উচিত বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন৷

উল্লেখ্য, ভারত ইউক্রেনের উপর হামলার সরাসরি নিন্দা না করলেও মোদী গত বছর পুতিনকে বলেছিলেন, ‘এটা যুদ্ধের সময় নয়’৷

জি-টোয়েন্টি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ৷ গত জুলাই মাসের পর আবার তাঁরা মুখোমুখি হলেও সরাসরি সংলাপের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷ ব্লিংকেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলছেন না৷ তাঁর মতে, রাশিয়া সত্যি আন্তরিকভাবে হামলা বন্ধ করতে অর্থবহ কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত হয়, সে ক্ষেত্রে আমেরিকা সবার আগে এগিয়ে আসবে৷ তবে এই মুহূর্তে তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে ব্লিংকেন মন্তব্য করেন৷

চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করার কথা ভাবছে, এমন ধারণার ফলেও উত্তেজনা বাড়ছে৷ পশ্চিমা বিশ্ব এ ক্ষেত্রে চীনের উপর চাপ সৃষ্টি করছে৷ আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত এখনো রাশিয়ার হামলার সরাসরি নিন্দা না করায় অস্বস্তি থেকে যাচ্ছে৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এএফপি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.