মাঠে কাজ করা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জা নয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখে মাঠে যেতে চায় না। এমনকি বাবা কৃষক সেটা বলতেও লজ্জা পায়। আজ সেই লজ্জাটা আর নেই। সেই লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি। মাঠে কাজ করা বা ফসল ফলানো এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, লজ্জার বিষয় নয়। সেই ভাবেই আমাদের তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে যখন আমাদের কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছিল না, ধান কাটতে আমি যখন আমাদের ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের সকল ছেলে-মেয়েকে নির্দেশ দিলাম তোমরা মাঠে যাও, ধান কাটো কৃষকের পাশে। তারা কিন্তু ধান কেটেছে। অর্থাৎ যেটা খেয়ে তোমাদের জীবন বাঁচবে সেই কাজ করাটা লজ্জার না, গর্বের। সেই মানসিকতাটাও চেঞ্জ করা একান্ত প্রয়োজন ছিল। আজকে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের যুব সমাজকে আরও সম্পৃক্ত করা দরকার। আমার মনে হয় স্কুলজীবন থেকে সম্পৃক্ত করা দরকার।

কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে এটাই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন তিনি। সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য তিনি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আমাদের বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষকদের সুবিধার জন্য তিনি ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দেন। পাকিস্তান আমলে দেওয়া ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের মুক্ত করে দেন। ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বিতরণ করা শুরু করেন, গৃহহীনদের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করা শুরু করেন। বাজেটে কৃষিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। বিদেশ থেকে সেচের ব্যবস্থা করার জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করা শুরু করেন। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করার পরিকল্পনাও তিনি হাতে নেন। কৃষি উৎপাদন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও বীজ বিতরণ করা শুরু করেন। তিনি সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেটা বলেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু খাদ্য নিরাপত্তা ও ধান উৎপাদনকে বেশি প্রধান্য দেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাল কিনতে পারছি না। যদি চাল কিনতে হয় তাহলে আপনাদের চাল পয়দা করে খেতে হবে। আপনারা জানেন, ১৯৭৪ সালে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। নগদ অর্থ দিয়ে কেনা খাদ্য বাংলাদেশে আসেনি। কৃত্রিমভাবে একটা দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। জাতির পিতা চেয়েছিলেন আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করবো। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন করে প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গবেষণার ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন- এই বাংলাদেশে সার চাইতে গিয়ে কৃষকদের গুলি খেয়ে মরতে হয়েছে। ১৮ জন কৃষককে বিএনপি সরকার গুলি করে মেরেছিল। তাদের অপরাধটা কী, তারা সার চেয়েছিল। বিদ্যুতের দাবি করতে গিয়ে ৯ জন মানুষ গুলি খেয়ে মারা যায়। শ্রমিকরা ন্যায্য মুজুরির আন্দোলন করতে গিয়ে ১৭ জন শ্রমিককে রমজান মাসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা সেই সমস্ত জায়গায় ছুটে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা ছিল- কৃষককে সারের পেছনে ছুটতে হবে না, সার কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যাবে। আর সেই ব্যবস্থা আমরা ২০০৯ সালে সরকারে এসে গ্রহণ করি।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টার দিকে গাজীপুরে পৌঁছান। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পৌঁছালে দুই শিশু প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী হাসি মুখে শিশুদের কাছ থেকে ফুলের তোড়া গ্রহণ করেন। পরে তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট চত্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী হেঁটে গিয়ে বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। তিনি কেন্দ্রটি ঘুরে ব্রি’র বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন উদ্ভাবন ও বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিচার্স ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ড. জেইন বালি।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.