কোম্পানির বিদেশি মালিকের শেয়ার বিক্রির অর্থ নেওয়ার সুযোগ দেবে বিডা

জনগণের সুবিধার্থে একই ওয়েবসাইটে সব সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)। এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে বিডার ওয়াবসাইটে বাংলাদেশ ব্যাংকের আট সেবা পাওয়া যাবে। এই সুযোগের মধ্যে থাকবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির বিদেশি মালিকের শেয়ার দেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে অর্থ বিদেশে নেয়ার অনুমোদন।

রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকে এক অনুষ্ঠানে এই চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে আরও তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংক।

সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের যে আটটি সেবা বিডার ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। তার মধ্যে রয়েছে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় মেয়াদি ঋণ গ্রহণের অনুমতি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার দেশ থেকে বিদেশে ও বিদেশ থেকে দেশে এবং বিদেশ থেকে বিদেশে হস্তান্তরের অনুমোদন, বিদেশ থেকে কোন কোম্পানির লভ্যাংশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা।

এছাড়া পরামর্শক ফি বিদেশে পাঠানোর অনুমতি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির বিদেশি মালিকের শেয়ার দেশী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে অর্থ বিদেশে নেয়ার অনুমোদন, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠানের অর্থ পুনরায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে পরিশোধের সুযোগ, বাংলাদেশে বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে অবশিষ্ট অর্থ বিদেশে পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়া এই সেবার অন্তর্ভূক্ত।

এদিকে এই চুক্তির ফলে ঘরে বসেই অগ্রণী ও মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের একাউন্ট খোলা যাবে বিডার অনলাইন সেবার মাধ্যমে। কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্বল্প সময়ের জন্য অনলাইন ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারবে একই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।

চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এছাড়া সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া।

আরও উপস্থিত ছিলেন, অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুরশেদুল কবীর, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এবং কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের কান্ট্রি ডিরেক্টর।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আগামি ৪ বছরের মধ্যে পুরোপুরি না হলেও ৭৫ শতাংশ লেনদেন অনলাইনভিত্তিক (ক্যাশলেস) করার চেষ্টা করছি। মানুষ নগদ টাকার ব্যবহার যত কম করবে; তার ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম তত বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘অনলাইনে আমাদের বিনিয়োগ যত বাড়বে তার ফলে আমাদের কর্মসংস্থান তত বৃদ্ধি পাবে। প্রতি বছর বাংলাদেশের কর্মবাজারে ২০ লাখ মানুষ নতুন করে প্রবেশ করে। এরমধ্যে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার সরকারি চাকরিতে যোগ যোগ দেয়ার সুযোগ পায়। চার থেকে পাঁচ লাখ লোক বিদেশে যায়। বাকিদের কর্মসংস্থান দেশের মাটিতেই করতে হবে। তাই বিনিয়োগের কোন বিকল্প নাই।’

তিনি আরও বলেন ‘আমাদের দেশে ব্যাপক পরিমাণে মধ্য আয়ের লোকবল তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম যত বৃদ্ধি পাবে দেশের উন্নয়ন তত টেকসই হবে। আমাদের দেশে প্রায় ২ কোটির বেশি লোক আছে যাদের প্রতি বছরের ইনকাম ১২ হাজার ডলারের বেশি। আমাদের দেশের অর্থনীতির বড় অংশ অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আসে। তাই স্থানীয় বাজারে বিনিয়োগের বড় ধরনের সম্ভবনা রয়েছে।

গভর্নর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক সেবা অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া প্রি-ফাইন্যান্স ও রি-ফাইন্যান্স (পুন:অর্থায়ন স্কিম) এর ঋণ বিতরণ হচ্ছে আরটিজিএস এর মাধ্যমে। এছাড়া আমাদের প্রধান ব্যবসাগুলো অনেক আগে থেকেই অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে বলে মন্তব করেন গভর্নর। আমরা বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে আটটি সেবা দেয়ার জন্য ইতিমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। যত দ্রুত সম্ভব আগামী এক মাসের মাধ্যমে সার্ভিসগুলোর মাধ্যমে সেবাগুলো বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করব। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। এজন্য বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অনলাইন ওয়ান স্টপ সার্ভিস সিস্টেম সেবা চালু করেছে বিডা। আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসেরর মাধ্যমে ১৫০ টি সার্ভিস দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে বিডা ৬৭ টি সেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আটটিসহ নতুন করে আরও ১২ টি সেবা যুক্ত হতে যাচ্ছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.