ব্যবসায় ঋণ পেতে ভোগান্তি বাড়ছে

সদ্য বিদায়ী বছরে দেশের পরিবেশ সূচকে সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে এসময় ব্যবসায়ীদের ঋণ পেতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। একইসঙ্গে ব্যবসায় পরিচালনায় জমি পাওয়াও বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স) ২০২২-২৩’ এর মোড়ক উন্মোচনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনটিতে তৈরীতে সহায়তা করেছে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি)।

এদিন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) লোকমান হোসেন মিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর ব্যবসায় উন্নয়ন সূচকে উন্নতি হয়েছে। ২০২২ সালে ব্যবসা সূচকে উন্নতি ৬১ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যেটি আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ছিল ৬১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। তবে ২০২২ সালে ব্যবসায়ীদের অর্থায়ন প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ বছর আগের বছরের চেয়ে ঋণ প্রাপ্তির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশেরও বেশি। এ বছর সূচক অবনতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ২২ শতাংশে। আগের বছরও তা ছিল ৫০ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

জরিপে অংশ নেয়া ৮৭ শতাংশ বলছেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে বা বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে গেলে তারা অনেক জটিলতার সম্মূখীন হয়েছেন। এজন্য তারা অ-ব্যাংকিং খাত বা এনজিও থেকে ঋণ বা বিনিয়োগ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এ ভোগান্তিতে বেশি পড়েছেন।

এতে বলা হয়, একজন উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু করতে গেলে কমপক্ষে ২৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মুখোমুখি হতে হয়। এর মধ্যে ১৫০টি সরকারি বিধি-বিধান মেনে চলতে হয় তাকে। বাংলাদেশে এখন কৃষি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা উদ্যোক্তা হওয়ার চেয়ে ফার্মাসিউটিক্যালস, কেমিক্যাল ও পোশাক খাতের ব্যবসা দেয়া অনেক সহজ হয়েছে বলেও উঠে এসেছে এ প্রতিবেদনে। ২০২২ সালে এ সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০২১ সালে তা ছিল ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।

এতে আরও বলা হয়, কারখানার জন্য জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে জরিপে অংশ নেয়া ৮৬ শতাংশ বলছেন, সরকারি সংস্থাগুলোকে বিপুল পরিমাণ ঘুষ দিতে হয়। দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে জমি পাওয়া কিছুটা সহজ। ২০২২ সালে এ সূচকে অবনতি হয়েছে। এ বছর তা ৫৩ দশমিক শুন্য ৭ শতাংশ, ২০২১ সালে যা ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। এদিকে সরকারি তথ্য প্রাপ্তিতে গত বছরের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। এ বছর সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ২০২১ সালে তা ছিল ৫৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

বিবিএক্সের এ জরিপটিতে ১০টি পিলারকে মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়েছে। এ দশটি মানদণ্ড হলো- ব্যবসা শুরু করা, জমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্যতা, সরকারি তথ্য-উপাত্তের সহজলভ্যতা, অবকাঠামো, শ্রম বিধিবিধান, বিরোধ নিষ্পত্তি, আন্তর্জাতিক ব্যবসায় সহজগম্যতা, কর আদায়, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ও ব্যবসার জন্য ঋণ প্রাপ্তি।

দশটি পিলারের মধ্যে ব্যবসা করতে গিয়ে অবকাঠামো নির্মাণে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ খাতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ, আগের বছরে এ সূচক ৭২ দশমিক ০২ শতাংশে ছিল।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকরা পোশাক ও পরিবহন খাতের তুলনায় ফার্মাসিউটিক্যালস, কেমিক্যাল ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে ভালোভাবে কাজ করছেন। শ্রম বিধি-বিধানের সূচকেও আগের বছরের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। ২০২২ সালে এ খাতে সূচক ৭৪ দশমিক ৪০ শতাংশ, ২০২১ সালে তা ছিল ৬৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

এছাড়া ব্যবসা ক্ষেত্রে বিরোধ নিষ্পত্তিতেও উন্নতি হয়েছে ২০২২ সালে। এ বছর এ খাতে সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। এর আগের বছর ২০২১ সালে তা ছিল ৫৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি হলেও চট্টগ্রাম বন্দরসহ বেশ কয়েকটি বন্দরে জটিলতা এখনও রয়েছে। আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বাণিজ্য সুবিধা এ বছর সূচকে উন্নতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ দশমিক ৬১ শতাংশ, ২০২১ সালে তা ছিল ৪৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন চট্টগ্রাম বন্দরে এখনও সময় অনেক বেশি প্রয়োজন হয়।

তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবাহারের সূচকেও ২০২২ সালে উন্নতি হয়েছে। এ বছর এ খাতে সূচক ৬০ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২১ সালে তা ছিল ৫৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.