‘মোড়কজাত করে বিক্রি হচ্ছে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ-স্যালাইন ব্যাগ, নল’

হাসপাতাল, ওষুধের দোকান ও ক্লিনিকে চিকিৎসা বর্জ্য পরিষ্কার ও মোড়কজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যবহৃত কাচের বোতল, সিরিঞ্জ, স্যালাইন ব্যাগ, রাবার ও প্লাস্টিক নলের মত পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করে শুধুমাত্র পরিষ্কার ও মোড়কজাত করে সরবরাহ করছে। এমন দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মীদের একটি সিন্ডিকেট সরাসরি কাজ করছে।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’-শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জের মত একইভাবে হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্লেড, ছুরি, কাঁচি, রক্তের ব্যাগ ও নল, ধাতব উপকরণের মত পুনঃচক্রায়নযোগ্য চিকিৎসা বর্জ্য নষ্ট বা ধ্বংস না করে সংক্রামিত অবস্থাতেই ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করা হয়। একইসঙ্গে রিসাইক্লিং কারখানাগুলোতে বিক্রি করে দেয়।  সংক্রমিত অবস্থায় এসব বর্জ্য পরিবহন করার ফলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী ও রিসাইক্লিং কারখানার কর্মীদের বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণায় বলা হয়, দেশের একটি জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কেজি প্লাস্টিক চিকিৎসা বর্জ্য অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।

আরও বলা হয়, চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি বর্জ্য সংরক্ষণ পাত্রে বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী কালার কোড থাকা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও হাসপাতালগুলোতে তা প্রতিপালনে ঘাটতি রয়েছে।  সার্বিকভাবে ২৯ শতাংশ হাসপতালের বর্জ্য সংরক্ষণের পাত্রে কালার কোড নেই এবং ৫১ শতাংশ পাত্রে সাংকেতিক চিহ্ন নেই। তাছাড়া বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী ক্ষেত্রবিশেষে হাসপাতালগুলো পাত্রে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে না।  কালারকোড থাকলেও বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী সঠিক পাত্রে বর্জ্য সংরক্ষণ না করে সব ধরনের বর্জ্য একই পাত্রে রাখা হয়। পর্যবেক্ষণে আরও দেখা যায়, নির্দিষ্ট পাত্রে বর্জ্য না ফেলে তার পাশে ফেলে রাখা হয়। এছাড়া রাসায়নিক ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য আলাদা করা এবং তা সাবধানতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েছে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, হাসপাতালগুলোতে সাধারণ চিকিৎসা বর্জ্য ও করোনার চিকিৎসা বর্জ্য আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয় না। সার্বিকভাবে ৪২ শতাংশ ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর বর্জ্য ও সাধারণ চিকিৎসা বর্জ্য একত্রে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়।

টিআইবি এক জরিপের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে দেশের ৬৪ জেলা থেকে ৪৫টি জেলা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত জেলার অন্তর্ভুক্ত ৪৭টি সিটি কর্পোরেশন-পৌরসভা এলাকাকে গবেষণা এলাকা হিসেবে নির্বাচন করে। তৃতীয় পর্যায়ে প্রতিটি গবেষণা এলাকা থেকে শয্যা সংখ্যার ভিত্তিতে হাসপাতালগুলোকে ১০০ শয্যার কম ও ১০০ শয্যার অধিক এই দুই স্তরে ভাগ করে। প্রতিটি স্তর থেকে একটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি, মোট ১৮৮টি হাসপাতালকে জরিপের জন্য নির্বাচন করে টিআইবি।

গবেষণা এলাকার আওতাভুক্ত ৪৭টি সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এবং এলাকাগুলোতে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ১২টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেও জরিপের জন্য নির্বাচন করে টিআইবি। তবে চূড়ান্তভাবে ২৩১টি প্রতিষ্ঠান (১৮১টি হাসপাতাল, ৩৮টি সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এবং ১২টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান) জরিপে অংশগ্রহণ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা বর্জ্যকর্মীদের মধ্য থেকে সমানুপাতিক নমুনা পদ্ধতিতে ৯৫ জনকে নির্বাচন করা হয় ও ৯৩ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।

একই সঙ্গে চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী চিকিৎসা বর্জ্য পুনঃব্যবহার রোধে ব্যবহৃত রাবার বা প্লাস্টিক নল ও বিভিন্ন ব্যাগ টুকরো করে কাটার নির্দেশনা থাকলেও তা প্রতিপালনে ঘাটতি রয়েছে। সার্বিকভাবে ২৮ শতাংশ হাসপাতালে ব্যবহৃত রাবার বা প্লাস্টিকের ব্যাগ কাটা হয় না এবং ৩১ শতাংশ হাসপাতালে ব্যবহৃত রাবার বা প্লাস্টিকের নল কাটা হয় না। গাইডলাইন অনুযায়ী পুনঃব্যবহার রোধ করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত সূঁচ ব্যবহারের পরপরই ধ্বংস বা গলিয়ে ফেলার নির্দেশনা থাকলে গবেষণায় দেখা যায়, ৪৯ শতাংশ হাসপাতালে সূচ ধ্বংসকারী (নিডল ডেস্ট্রয়ার) যন্ত্রটি নেই।

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.