বিতরণ করতে গিয়ে মমতা দেখেন শীতবস্ত্র নেই

পঞ্চায়েত ভোটের আগে মমতা এখন পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগঞ্জে যাচ্ছেন, সভা করছেন, ঢুকে পড়ছেন স্কুলে, গরিবের দাওয়ায় বসে ভাত খাচ্ছেন, গ্রামের মধ্যে ঢুকে মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। সেই সঙ্গে দেদার শীতবস্ত্র বিলি করছেন।

দিন দুয়েক আগে হিঙ্গলগঞ্জে ওই শীতবস্ত্র বিলি করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। সভায় মুখ্যসচিব, ডিএম, ওসি, আইসি সবাই আছে। কিন্তু কোনো শীতবস্ত্র নেই। মমতা ভাষণ দিতে উঠে বলেন, ‘আমি এখানে আসব বলে ১৫ হাজার শীতবস্ত্র কিনে এনেছি। পাঁচ হাজার সোয়েটার, পাঁচ হাজার কম্বল, পাঁচ হাজার চাদর। এটা যেন মানুষ ঠিকভাবে পান। আমি নিজেও নজর রাখব।’

তারপর মমতা পিছনের দিকে ঘুরে পুলিশ ও আমলাদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘কোথায় রেখেছেন। কী করেছেন? ১৫ হাজার শীতবস্ত্র আমি কেবল এই এলাকার জন্য এনেছিলাম। কোথায় সেটা?’ আমলারা জবাব দেন, বিডিও অফিসে আছে। মমতার পাল্টা প্রশ্ন, ‘কেন বিডিও অফিসে থাকবে? বলুন বিডিওকে নিয়ে আসতে। আমি অপেক্ষা করব। বনদেবীর পুজো উপলক্ষে আমি সোয়েটার, কম্বল, চাদর কিনে এনেছি। এসে দেখছি কিছু নেই। আমি মিটিং করতে নয়, এগুলো দিতে এসেছিলাম।’

তারপর মমতার হুমকি, ‘যদি বিডিওরা ঠিকমতো কাজ না করেন, আইসি ঠিকভাবে কাজ না করেন, আমি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। এতবড় জনসভায় না দিতে পারলে ছোট ছোট শিবির করে শীতবস্ত্র দেয়া যেত। আরো লাগলে আমি দেখতাম। কিন্তু এখানে একটাও নেই কেন?’

এরপর মমতা বলা বন্ধ করে বসে পড়েন। তার মিনিট কুড়ি পর দুই দফায় এক হাজার দুইশর মতো পোশাক এসে পৌঁছায়। মমতা তা বিলি করেন। বলে যান, শীতবস্ত্র কোথায় বিলি হলো, তার উপর তিনি নজর রাখবেন।

মুখ্যমন্ত্রী সভায় যখন শীতবস্ত্রের কথা বলছেন, তখন তাকে জানানো হয়, সেটা বিডিও অফিসে আছে। সেই বিডিও অফিস ছিল সভাস্থল থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে। পরে যখন কিছু পোশাক আসলো, তার সংখ্যা ১৫ হাজারের ধারেকাছে নয়। কেন এমন হলো?

জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী সভা থেকে শীতবস্ত্র বিলি করবেন, তার আগাম খবর ছিল না। বলা হয়েছিল, শীতবস্ত্র ব্লক অফিস থেকে বিলি করা হবে। প্রশাসনিক রীতি হলো, মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি সম্পর্কে তার অফিস জেলাশাসককে বিস্তারিত জানায়। কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের অফিসাররাও থাকেন। তারপরেও এই গন্ডগোল হয় কী করে? কোনো উত্তর কারো জানা নেই।

সূত্র জানাচ্ছে, যে এক হাজার দুইশর মতো পোশাক দিয়ে মুখরক্ষা হয়েছে, তা হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক অফিস থেকে কালীতলা যাচ্ছিল। সেই গাড়ি ঘুরিয়ে সভাস্থলে নিয়ে আসা হয়।

রাজ্য়ের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিয়োগ, মুখ্যমন্ত্রী সত্যিকথা বলছেন না। মমতা বলেছেন, তিনি নাকি শীতবস্ত্র কিনে এনেছেন। শুনে মনে হবে, তিনি নিজের টাকায় কিনেছেন। অথচ, শীতবস্ত্র কেনার অর্ডার সরকার দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বলির পাঁঠা করছেন। সূত্র: ডিডাব্লিউ, ইন্ডিান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.