হানিফ পরিবহণের ২ মালিকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

নথি জালিয়াতি

চট্টগ্রাম অঞ্চলের হানিফ পরিবহণ সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি আনিসুল ইসলামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

উচ্চআদালতের ভুয়া আদেশ তৈরির ঘটনা সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলেও জানিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে উচ্চ আদালতের ভুয়া আদেশ তৈরির ঘটনা তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আইন মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, পুলিশের আইজি, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত শেষ করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ১৪ নভেম্বর উচ্চ আদালতের ভুয়া আদেশ তৈরির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট। তারা হলেন- হানিফ পরিবহণ সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি আনিসুল ইসলাম, প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার। এরই ধারাবাহিকতায় তারা আদালতে হাজির হলেও ভুয়া আদেশ তৈরির কথা কেউ স্বীকার করেননি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, হানিফ পরিবহণ সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হলেন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। আর হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি হলেন আনিসুল ইসলাম। পরিবহণ ব্যবসায় জড়িত এই দুই কোম্পানি ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এই ‘হানিফ’ এর ট্রেডমার্ক নং ১৭৪৬৭। কিন্তু গত ২৩ অক্টোবর বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের দুই বিচারপতির নাম উল্লেখ করে একটি জাল আদেশ প্রস্তুত করা হয়। ওই জাল আদেশের রিট আবেদনের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ১৫৩২১/২০২২। রিট আবেদনকারী হলেন হানিফ পরিবহণ সার্ভিস লিমিটেড। বিবাদী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, প্যাটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবং হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি আনিসুল ইসলামকে। আদেশে ওই বেঞ্চের সরকারি আইন কর্মকর্তা হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা বেশ কয়েক বছর আগেই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া আদেশে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নামের বানানও ভুল লেখা হয়েছে।

জাল আদেশে বলা হয়েছে, হানিফ সুপার প্রাইভেট লিমিটেড যেন ‘হানিফ’ ট্রেডমার্ক তার পরিবহণে ব্যবহার করতে না পারে সেই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো। গত ১৬ অক্টোবর হানিফ পরিবহণ সার্ভিস লিমিটেডের করা আবেদনটি ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে জাল আদেশে।

জাল আদেশের একটি ফটোকপি ওই বেঞ্চের বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামানের কাছে আসে। এরপরই জালিয়াতির বিষয়টি বেঞ্চের নজরে আনেন তিনি। ওই জাল আদেশের কপি দেখে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বেঞ্চের বিচারপতিরা। আদালত বলেছেন, মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ জাল আদেশ সৃজন করা হয়েছে। এটা বড় ধরনের প্রতারণা। এ ধরনের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা বিনষ্ট হয়। এরপরই হাইকোর্ট তলবের পাশাপাশি জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.