আমি মূলত দেশের গণমানুষের জন্য গান করি- সাব্বির নাসির

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সাব্বির নাসির। তাঁর গাওয়া বেশকিছু গান অল্প সময়ে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাশাপাশি তাঁর গানগুলোর দৃষ্টিনন্দন ভিডিও দর্শকদের মুগ্ধ করছে। কয়েকটি মিউজিক ভিডিওতে স্বল্প সময়ে এক কোটিরও বেশি দেখা হয়েছে। সম্প্রতি তিনি ঐক্য-চ্যানেল আই ১৭তম মিউজিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এর আগেও দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি অ্যাওয়ার্ড তাঁর ঝুলিতে ঢুকেছে। অর্থসূচকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তাঁর সঙ্গীত চর্চা ও আগামীদিনের ভাবনাসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন  যুগ্ম-সম্পাদক ইসমাত আরা ও স্টাফ রিপোর্টার মাসুম রহমান।

আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে এই আলাপচারিতা শুরু করতে চাই। সম্প্রতি আপনি ঐক্য-চ্যানেল আই ১৭তম মিউজিক অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামে ফোক ফিউশন ক্যাটাগরিতে ‘আধা’ গানটির জন্য শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন। এতে আপনার অনুভূতি কেমন…।

সাব্বির নাসিরঃ পুরস্কার পেলে তো ভালোই লাগে। চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষের থেকে পাওয়া এটা আমার দ্বিতীয় পুরস্কার। এর আগে আমি ২০২০ সালে সেফকিপার চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেলাম। ‘আধা’ গানটি আগে গ্লোবাল মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ব্রোঞ্জ পুরস্কার পায়। সবধরণের পুরস্কার পাওয়াই আসলে আনন্দদায়ক। তবে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হল আমার বেশ কিছু গান শ্রমজীবী মানুষের আনন্দ বেদনার অংশ। হয়তো কোনো এক কাঠমিস্ত্রীর দল শুনছে কাজের তালে তালে বা কোনো রিকশাশ্রমিক বা ক্যান্টিন বয়।

এর আগেও আপনি দেশী ও আন্তর্জাতিক একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এসব পুরস্কার শুধু আপনাকে নয়, দেশের অন্য শিল্পীদেরকেও সঙ্গীত চর্চায় আরও উদ্বুদ্ধ করে বলে আমাদের বিশ্বাস। এই বিষয়গুলোকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

সাব্বির নাসিরঃ পুরস্কার অবশ্যই আত্মবিশ্বাস বাড়ায়-ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দেয়া । তবে আমার কাছে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গণমানুষের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা। তাঁদের মনে, হৃদয়ে গানটার স্থান পাকা পোক্ত হওয়া । আমার বেশিরভাগ গান দেশের গণমানুষের জন্য। তবে ব্যতিক্রমও আছে, সেসব গান এক্সপেরিমেন্টাল। এক্সপেরিমেন্টাল গান আসলে সব স্তরের মানুষের কাছে খুব একটা পৌঁছায় না। কারণ হচ্ছে সব গান আসলে সবার জন্য না। একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে দুই ধরণের গানই আমার আছে।

যতটুকু জানি, শুরুর দিকে আপনার মনোনিবেশ ছিল মূলত রক অ্যান্ড ব্লুজ মিউজিকে। সেখান থেকে বাংলা লোকসঙ্গীত বা ফোক ফিউশনের দিকে বাঁকবদল কীভাবে হল?

সাব্বির নাসিরঃ ‘আমারে দিয়া দিলাম তোমারে’ শিরোনামের একটা গান গেয়েছিলাম একটি নাটকের জন্য। সেটা গেয়েছিলাম ৪ হাজার টাকার বিনিময়ে। গানটা অনেক জনপ্রিয় হয়। পরবর্তীতে গানটির স্বত্ব (কপিরাইট) আমি নেই আমার চ্যানেলের জন্য। তখন আমার দর্শকদের মাঝে ফোক গানের একটা চাহিদা আছে বুঝতে পারি। তখন আমি দেখলাম আমাক ফোক গানগুলো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে বেশি। সেটা একটা কারণ বাঁকবদলের। আরেকটা হচ্ছে এই সংগীত চর্চা করতে করতে আত্মার অনুসন্ধান বা নিজের সম্পর্কে জানার প্রক্রিয়ায় লোকগান অনেক প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, যে এই দেশের মানুষজন নানা রকমের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাঝে পড়েছে। একটা আগ্রাসন এসেছে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে, আরেকটা আগ্রাসন হচ্ছে ভারতীয় সংস্কৃতি। আরেকটা আরব সংস্কৃতি। এই পুরো বিষয়টাই আমার কাছে মনে হয় আগ্রাসন। বাংলার মানুষের শেকড় হারিয়ে গেছে। আর আমি সেই শেকড়ের সন্ধানে আছি। তাই আমি যখন লোক গান নিয়ে কাজ করি আমার মনে হয় যে শেকড়ের দিকেই যাচ্ছি।

আপনার ইংরেজী মৌলিক গান ‘ড্রাউনিং’ তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল। ভেন্টসসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মিউজিক ম্যাগাজিনে এটি নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। ইংরেজী গান নিয়ে আপনার ভাবনা কী? বাংলার পাশাপাশি এটিও কী সমানতালে চালিয়ে যাবেন?

সাব্বির নাসিরঃ এই গানটি মূলত এসেছিলো নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রজেক্ট থেকে। যিনি এই প্রজেক্ট লীড করেছেন উনার নামটা আমার ঠিক মনে নেই। উনি সারা পৃথিবীতে এই প্রজেক্টটি পরিচালনা করেছেন। তখন আমাদের এখানে এপিরাসের সাথে উনার যোগাযোগ হয়।
এপিরাস আমার সাথে যোগাযোগ করে । জানতে পেরেছি আমার ভয়েজ তাঁরা পছন্দ করেছে । গানটা প্রথমে এক স্কেলে ছিলো, আমি ছয় স্কেল উপর থেকে গানটা গাই। গানটা ভালো হয়েছে, সবাই তাই বলে আরকি। তারপরে আরেকটা গানের জন্যে নেটফ্লিক্স থেকে যোগাযোগ করেছিলো আমার সাথে ড্রাউনিং রিলিজ হবার পরেই। গানটা নিয়ে নেটফ্লিক্সের একজন প্রডিউসার আমার সাথে যোগাযোগ করে এবং সেই যে সে আমাকে গানটা দিয়েছে আমার সেটা আর গাওয়াই হয়নি। ইচ্ছে আছে ইংরেজি গান করার। কিন্তু কখন হবে কি হবে তা জানি না। যখন যেটা ভাললাগে তখন সেটা করি।

‘বিনোদিনী রাই’ দিয়ে আপনি প্রথম ফোক ফিউশনে বড় সাড়া ফেলেছিলেন। পরবর্তীতে লোকসঙ্গীতেই আপনার পরিবেশনায় নানা বৈচিত্র্য দেখেছি। সম্প্রতি আপনার প্রথম নাতে রাসুল (সা:) ‘কি নেশা’ আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আগামী দিনে নতুন আর কী নিয়ে আসার কথা ভাবছেন?

সাব্বির নাসিরঃ আমার সামনে দুটো খুব সুন্দর গান আসছে। আমার ধারণা এই দুটি গান ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয় হবে। ফোক ফিউশনের সাথেই আমার সম্পর্ক ইদানীংকার। আমি অন্য চ্যানেলের জন্যে রক ব্লুজ এখনো গাচ্ছি। কিন্তু আমার মূল দৃষ্টি এখন আধ্যাত্মিক গানের দিকে। সামনে যে দুইটা গান আসছে তার একটা গান কবি অসীম সাহার ‘তুমি আমার প্রজাপতি’। এটা খুব সুন্দর একটা গান। আরেকটা হচ্ছে মেহেদী হাসান তামজিদের লিখা।

আপনার গানের পাশাপাশি মিউজিক ভিডিওগুলোর ভিজ্যুয়ালাইজেশন দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমন চমৎকার কম্বিনেশনের রহস্যটা একটু বলবেন প্লিজ।

সাব্বির নাসিরঃ আমি কিছু কাজ করি খুবই দক্ষ ভিডিও বা সিনেমা পরিচালকদের সাথে। সেগুলো কালে ভদ্রে করি। যেমন বছরে একটা বা দুইটা। যেমন আধা, ড্রাউনিং ইত্যাদি। এগুলো ডিমান্ড করে একটা বড় সড় ভিন্ন রকম প্রেক্ষাপটের। আর বাকি গানগুলোতে আমার সাথে দেশের তরুণ নির্মাতারা কাজ করে। আমি তাদের বলি- গেরিলা নির্মাতা। এরা খুবই সৃজনশীল ।

আপনি অসংখ্যা তরুণের আইডল। তরুণদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতেন।

সাব্বির নাসিরঃ তরুণদের আইডল! আমি আসলে সেভাবে চিন্তা করি না । আমি তরুণদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো ‘নিজেকে নিজের ছাপিয়ে যাওয়া উচিৎ। আর দেশকে ভালোবাসতে হবে। এই দেশ এবং দেশের শেকড়কে অবশ্যই ভালবাসতে হবে।

অর্থসূচক/এমআর/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.