সংকটের মধ্যেও বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ

দুই বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারির ধাক্কা সামাল দিচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতিতে শঙ্কা আরও বেড়ে যায়। এ সময় স্বস্তির ইঙ্গিত দিয়েছিলো বিদেশি বিনিয়োগ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে দেশে। এর পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের উপর হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

বিভিন্ন খাতে মোট যে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট অঙ্ককে নিট এফডিআই বলা হয়। করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বিনিয়োগ আসার কিছুটা আবহ তৈরি হয়েছিলো। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা লাগে। এছাড়া দেশে ডলার সংকটের মধ্যে অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট এফডিআই বেড়েছে ৮ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এই তিন মাসে ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ডলারের নিট এফডিআই এসেছে দেশে। গত বছরের এই সময়ে এসেছিল ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছিল দেশে, যা ছিল আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। নিট এফডিআই বেড়েছিল আরও বেশি, ৬১ শতাংশ। গত অর্থবছরে নিট এফডিআইর পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৩৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। এ সময় নিট এফডিআই এসেছিল ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩২৩ কোটি ৩০ লাখ (৩ দশমিক ২৩ বিলিয়ন) ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। নিট বিনিয়োগের অঙ্ক ছিল ১২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল দেশে। এর মধ্যে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি ডলার। দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসে ওই বছর।

দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ কমেছে। আগস্টে এই হার ছিল ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা কমে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাড়তে বাড়তে চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ ১১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে উঠেছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। মার্চে তা দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে ওঠে। সর্বশেষ জুন মাসে তা আরও বেড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিলো। এরপর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে খাতটিতে ঋণপ্রবাহ কিছুটা বড়লেও সেপ্টেম্বরে এসে কিছুটা কমে যায়।

অন্যদিকে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮ হাজার ২৪৯ কোটি ৫০ লাখ (৮২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন) ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছিলো বাংলাদেশ। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি। তবে আমদানির লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। এর প্রভাবে আমদানি খরচ কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১ হাজার ৯৩৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ১৮০ কোটি ডলারের পণ্য। এতে ৭৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় মুদ্রায় ডলার প্রতি ১০৩ টাকা দরে হিসাবে এর পরিমাণ আসে ৭৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা।

তথ্য মতে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বিলাসবহুল পণ্যে শতভাগ পর্যন্ত এলসি মার্জিনের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া যেকোনো পণ্যে ৩০ লাখ ডলারের বেশি অঙ্কের এলসি খোলার একদিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হচ্ছে। ব্যাংকের পাশাপাশি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে অভিযান চালিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিজিটাল হুন্ডি বন্ধেও বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এ রকম বিভিন্ন উদ্যোগের প্রভাবে সেপ্টেম্বরে এলসি খোলা কমেছে। এ সময় বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মোট ৫৭০ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়, আগের মাস আগস্টের তুলনায় যা ৬৩ কোটি ডলার বা ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ কম।

অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.