উৎক্ষেপণের পর আকাশেই বিধ্বস্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র

উৎক্ষেপণের পরপরই আকাশেই বিধ্বস্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ক্ষেপণাস্ত্র। বিধ্বস্ত ওই ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি শহরে ঘটে বিরাট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এতে করে সেখানে দেখা দেয় আতঙ্ক।

দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বুধবার (৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মূলত উত্তর কোরিয়া থেকে ক্রমকর্ধমান হুমকির মধ্যেই এই ঘটনা ঘটায় তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আরও বেশি।

মূলত মঙ্গলবার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাপানের ওপর দিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত উত্তর কোরিয়া। এটি ছিল মধ্যবর্তী-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইআরবিএম)। এর প্রতিক্রিয়ায় নিরাপত্তা মিত্র সিউল ও ওয়াশিংটন নকল লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণসহ একাধিক যৌথ মহড়া করেছে।

এএফপি বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার গভীর রাতে হিউনমো-২ নামে স্বল্প-পাল্লার একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। কিন্তু উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ পরই এটিতে ত্রুটি দেখা দেয় এবং একপর্যায়ে সেটি বিধ্বস্ত হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উৎক্ষেপণের পরপরই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রপেলান্টে আগুন লেগে যায়। তবে এরপরও ক্ষেপণাস্ত্রটির ওয়ারহেড বিস্ফোরিত হয়নি।

এদিকে ক্ষেপণাস্ত্রটি বিধ্বস্ত ও মাটিতে আছড়ে পড়ার পর সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল এই ভিডিওতে দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের গ্যাংনিউং শহরের একটি বিমান বাহিনীর ঘাঁটির কাছে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এই ফুটেজের সত্যতা অবশ্য এএফপি যাচাই করতে পারেনি।

গ্যাংনিউং সিটি হলের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এই ঘটনার পর আতঙ্কিত ও উন্মত্ত অনেক বাসিন্দা সিটি হলে ফোন কল করেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রথমে আমরা জানতাম না কী ঘটছে। কারণ আমরা সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে এই ধরনের প্রশিক্ষণের বিষয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি পাইনি।’

১৯৫০-৫৩ সাল পর্যন্ত কোরিয়ান যুদ্ধ চললেও শান্তি চুক্তির পরিবর্তে একটি যুদ্ধবিরতিতে সেটি সাময়িকভাবে শেষ হয়। এরপর থেকে দক্ষিণ এবং উত্তর কোরিয়া কার্যত নিজেদের মধ্যে প্রযুক্তিগতভাবে যুদ্ধ করছে। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সরাসরি সশস্ত্র সংঘর্ষ বিরল হলেও মঙ্গলবার রাতে ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বস্তের ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার এই শান্ত শহরের কিছু বাসিন্দা বিশ্বাস করে যে, যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় একজন ব্যবহারকারী বলেছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম হয়তো যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু পরে জানলাম এটি সামরিক প্রশিক্ষণের কারণে হয়েছে।’

অন্য একজন ব্যবহারকারী টুইট করেছেন, ‘(কী ঘটেছে) তা নিশ্চিত করতে তাদের এত সময় লাগলো? যদি আসলেই যুদ্ধ হয়, তাহলে আমরা সম্ভবত পরের দিন এটি সম্পর্কে জানতে পারব।’

দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বস্তের ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি এবং তারা এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করছেন।

এদিকে পূর্ব এশিয়ায় উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের একদিনের মাথায় এবার পাল্টা চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার পূর্ব সাগরে ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে দেশ দু’টি।

মূলত মঙ্গলবার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাপানের ওপর দিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত উত্তর কোরিয়া। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানায়, জাপানের ওপর দিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার জবাবে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যেকে দু’টি করে আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। সবগুলো ক্ষেপণাস্ত্রই নকল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।

অর্থসূচক/এমআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.