ইউরোপে চরম দক্ষিণপন্থি শক্তির পুনরুত্থান নিয়ে দুশ্চিন্তা

ইউরোপে চরম দক্ষিণপন্থি শক্তির উত্থান নতুন ঘটনা নয়৷ একাধিক দেশে এই শক্তি এমনকি সরকারও গঠন করেছে৷ কিন্তু বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে মহাদেশের একাধিক প্রান্তে ‘পপুলিস্ট’ ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দলগুলি যেভাবে নির্বাচনে সাফল্য পাচ্ছে, তা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে৷ ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার জের ধরে জ্বালানি সংকট এবং অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় নাস্তানাবুদ সাধারণ মানুষ বার বার কেন চরম দক্ষিণপন্থিদের প্রতি আস্থা দেখাচ্ছে, সে বিষয়ে তর্কবিতর্ক চলছে৷ অভূতপূর্ব সংকট মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ঐক্যের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷

ইইউ-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ ইতালির ভবিষ্যৎ সরকারে চরম দক্ষিণপন্থিদের দৌরাত্ম্যের ফলে সে দেশ এই রাষ্ট্রজোটের মূল্যবোধ রক্ষা করবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ সেই মূল্যবোধ না মানার অভিযোগে হাঙ্গেরির চরম দক্ষিণপন্থি সরকারের উপর আর্থিক শাস্তি চাপিয়েছে ব্রাসেলস৷ কিন্তু ইতালির বিরুদ্ধে সে রকম পদক্ষেপ কার্যকর করা কতটা বাস্তবসম্মত হবে, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷ বিধ্বস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ইতালির নতুন সরকারকেও ইইউ-র আর্থিক সহায়তার উপর নির্ভর করতে হবে, এমন আশা বুকে বেঁধে বড় অঘটনের আশঙ্কা মন থেকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন ইউরোপের কিছু নেতা৷

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্ন বলেন, ইতালিতে ভবিষ্যতেও মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করা হচ্ছে কিনা, তাঁর সরকারও সে দিকে নজর রাখবে৷ তার মতে, ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্টও গর্ভপাতের অধিকারের মতো বিষয়ে ইতালির নতুন সরকারের অবস্থান খতিয়ে দেখবেন৷ উল্লেখ্য, ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন ইতালির নির্বাচনের আগেই মন্তব্য করেছিলেন, ইউরোপের যে কোনো দেশে পরিস্থিতি ‘কঠিন দিকে’ এগোলে ইইউ-র হাতে তা সামলানোর ‘টুল’ বা কৌশল রয়েছে৷

এতকাল ব্রাসেলকে মূলত পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির মতো দেশে চরম দক্ষিণপন্থি সরকারের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়েছে৷ সুইডেনেও এই শক্তির সাম্প্রতিক নির্বাচনি সাফল্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে৷ এবার সেই তালিকায় ইতালিও যোগ হলে সেই উদ্যোগ আরও কঠিন হয়ে উঠবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ এই তিন দেশ মিলে ইইউ-র মধ্যেই এক ‘জাতীয়তাবাদী ব্লক’ সৃষ্টি করে বার বার বিঘ্ন ঘটাতে পারে৷

ইতালির ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি নির্বাচনি প্রচারের সময়ে গর্ভপাত ও এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠীর অধিকার, ইসলামপন্থি হিংসা ও শরণার্থীদের ঢলের মতো বিষয়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্য ও দাবি করেছিলেন৷ তবে অতীতের তুলনায় তিনি নিজের সুর অনেকটা নরম করে রক্ষণশীল ভোটারদের মনও জয় করেছেন৷ এমনকি রাশিয়ার প্রতি চরম দক্ষিণপন্থিদের নরম মনোভাব থেকেও সরে এসেছেন তিনি৷ হাঙ্গেরির সরকার রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার প্রশ্নে গণভোটের ঘোষণা করায় অবশ্য ইতালির নতুন সরকারের শরিকরাও উৎসাহ পেতে পারে৷ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর মেলোনি ইইউ-র সঙ্গে কতটা সংঘাতের পথে যাবেন, আপাতত সবার নজর সেদিকেই৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, এপি, ডিপিএ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.