রাজনীতি ছাড়লেন আল-সদর, সংঘর্ষে নিহত ১৭

ইরাকের প্রভাবশালী রাজনৈতিক সংগঠন সাদর মুভমেন্টের প্রধান মুক্তাদা সাদর রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর বাগদাদে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে কমপক্ষে আরও ৩৫০ জন। নিহতদের সবাই সদরের সমর্থক বলে জানা গেছে।

সাদর মুভমেন্টের নেতা মুক্তাদা সাদর এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি কখনোই নেতৃত্ব এবং ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের দাবিদার ছিলেন না। তাই আমি রাজনীতি থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি আমি মারা যাই বা আমাকে হত্যা করা হয়, তাহলে আমার জন্য প্রার্থনা করবেন।

আল-সদর দীর্ঘদিন ধরে ইরাকের রাজনীতিতে বড় নাম। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কারে রাজি না হওয়ার জন্য তিনি শিয়া নেতাদের কড়া সমালোচনা করেছেন। আল-সদর বিস্তারিতভাবে তার পরিকল্পনার কথা জানাননি। তিনি বলেছেন, কিছু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংগঠন খোলা থাকবে। এরপর তার সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধী গোষ্ঠীর সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। আল-সদর ঘোষণা করেন, এই সংঘর্ষ না থামা পর্যন্ত তিনি অনশন করবেন।

আল-সদরের ঘোষণার পরেই তার সমর্থকরা রিপাবলিকান প্যালেসের ভিতরে ঢুকে পড়েন। এখানেই প্রধানমন্ত্রীর অফিস। হাজার হাজার সমর্থক সেখানে ঢুকে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল কাধিমি জানিয়েছেন, পরবর্তী ঘোষণা পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠক বাতিল করলেন।

এই প্যালেসের সামনে সিমেন্টের ব্যারিকেড লাগানো ছিল। বিক্ষোভকারীরা দড়ি দিয়ে সেসব ব্যারিকেড ফেলে দেয়। এরপর ইরাকের সেনা জানায়, বিক্ষোভকারীরা যেন প্যালেস থেকে চলে যায়। তারা যেন সংযত থাকে। সংঘর্ষে না জড়ায়। সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারি ভবন, আন্তর্জাতিক মিশন, বেসরকারি বাড়ি রক্ষার দায়িত্ব তাদের। এরপর ইরাকের সামরিক বাহিনী রাজধানী বাগদাদের সর্বত্র কারফিউ জারি করেছে।

কিন্তু এরপরেও আল-সদরের সমর্থকরা বিক্ষোভ জারি রেখেছেন। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, তারা বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে বদ্ধপরিকর।

বাগদাদে গ্রিন জোনের বাইরে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা সমানে গুলির শব্দ পাচ্ছেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে। আল-সদরের সমর্থক এবং ইরানপন্থি গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি চলেছে। বিক্ষোভকারীরা বিমানবন্দর যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।

আমেরিকায় হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, তারা ইরাকে দূতাবাস বন্ধ করার কথা ভাবছেন না। তবে তিনি জানিয়েছেন, ইরাকে অস্থিরতার ঘটনায় আমেরিকা চিন্তিত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সদরবিরোধী হিসেবে পরিচিত ইরানসমর্থিত শিয়াপন্থি দলগুলোর সঙ্গে সদর সমর্থকদের গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।

ইরাকে প্রায় ১০ মাস আগে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও রাজনৈতিক বিরোধের কারণে এখন পর্যন্ত নতুন সরকার গঠন করা সম্ভব হয়নি। সাদর মুভমেন্টের কিছু দাবির কারণে সরকার গঠনে বিলম্ব হচ্ছে। আল-সদর ইরাকের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান উভয় দেশের প্রভাবের অবসান চান। তাই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে জোট গড়তে অস্বীকার করেন। যার ফলে নির্বাচনের পর নয় মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন সরকার গড়তে পারছে না কেউ। খবর- আল-জাজিরা, বিবিসি, এপি, এএফপি, রয়টার্স, পার্সটুডে

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.