সম্রাটের জামিন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে দুদকের আবেদন

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্রাটের জামিন বাতিলের আবেদনের অনুমতি দেয়। এরপর সম্রাটের জামিন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে দুদক।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনের ওপর শুনানি করতে পারেন বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

এর আগে হাইকোর্ট বেঞ্চ সম্প্রতি সম্রাটকে জামিন দেওয়া নিম্ন আদালতের আদেশ বাতিল করার জন্য আবেদনের দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুমতি দেয়।

২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার ক্যাসিনোতে প্রায় ২২২ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় সম্প্রতিকালে একটি আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। জামিনে মুক্তি পাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে গত প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে হাজির হয়ে শো-ডাউন করেন সম্রাট।

অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তাঁর সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তখন র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারের সময় সম্রাট ও আরমান মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের কাছে বিদেশি মদ ছিল। গ্রেপ্তারের পর সম্রাট ও আরমানকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়। পরে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‍্যাব। সম্রাটের কার্যালয়ে বন্য প্রাণীর চামড়া, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পাওয়ার কথা জানানো হয়। এরপর সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার বিবরণী অনুযায়ী, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন।

গত ১১ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় জামিন পান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। জামিন আদেশের পর সম্রাটের আইনজীবী মাহবুবুল আলম দুলাল জানিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা করা হয়। অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচারের মামলায় ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছেন তিনি। কারাগারে ছিলেন শুধু দুদকের মামলায়। তবে সে মামলাতেও জামিন পাওয়ায় তার মুক্তিতে বাধা নেই। এরপর কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে একইদিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) তার জামিনের কাগজপত্র পৌঁছালে সেখানেই মুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।

এরপর সে জামিনাদেশ স্থগিত ও বাতিল চেয়ে গত ১৬ মে হাইকোর্টে আবেদন জানায় দুদক। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে সম্রাটের জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আদালত। গত ২২ মে সম্রাটের জামিন বাতিল করা হাইকোর্টের লিখিত আদেশ প্রকাশিত হয়। পরে সে আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানান সম্রাট। কিন্তু আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে গত ১০ আগস্ট সম্রাটকে জামিন না দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

এরপর ২২ আগস্ট অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জামিন পান ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান তাকে জামিনের আদেশ দেন। অসুস্থতার কারণে তাকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন আদালত। এরপর তিনি গত ২৬ আগস্ট মুক্তি পান। তবে তার জামিন আটকাতে পুনরায় আবেদনের বিষয়ে হাইকোর্টের অনুমতি নিলো দুদক।

সম্রাটের চারটি মামলার কোনোটিরই বিচারকাজ শুরু হয়নি। তবে তিনটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আরেকটি মামলার তদন্তই শেষ হয়নি।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.