সম্রাটের জামিন বাতিলের আবেদনের অনুমতি পেল দুদক

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন পুনরায় বাতিল চেয়ে দুদকের আবেদনের বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্টে।

সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে জামিন আবেদনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।

গত ২২ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় জামিন পান ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান তাকে জামিনের আদেশ দেন।

সে সময় সম্রাটের আইনজীবী আফরোজা শাহনাজ বলেন, ‘সম্রাট গুরুতর অসুস্থ। এর সপক্ষে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। দুপক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তাঁকে জামিন দিয়েছেন। সম্রাটকে তাঁর পাসপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। আর আদালতের অনুমতি না নিয়ে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।’

জামিনে কারামুক্ত হয়ে ২৬ আগস্ট দুপুরে হাসপাতাল ছাড়েন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।

১৯৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের উপপরিদর্শক রাশেদুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় এই মামলা (মামলা নম্বর ১৪) করেন। সম্রাট তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের মাধ্যমে ১৯৫ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট পর্যন্ত সম্রাট সিঙ্গাপুরে ৩৫ বার, মালয়েশিয়ায় তিন বার, দুবাইতে দুই বার এবং হংকংয়ে একবার ভ্রমণ করেছেন। এছাড়া তার সহযোগী এনামুল হক আরমান ২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৮ মে পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ২৩ বার ভ্রমণ করেছেন। সম্রাট ও আরমান অবৈধ অর্থ দিয়ে যৌথভাবে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তাঁর সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তখন র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারের সময় সম্রাট ও আরমান মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের কাছে বিদেশি মদ ছিল। গ্রেপ্তারের পর সম্রাট ও আরমানকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়। পরে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‍্যাব। সম্রাটের কার্যালয়ে বন্য প্রাণীর চামড়া, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পাওয়ার কথা জানানো হয়। এরপর সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে।

পরে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার বিবরণী অনুযায়ী, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকায় ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সেগুলোতে লোক বসিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ আছে। অনেক সময় ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করতেন।

গত ১১ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় জামিন পান ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। জামিন আদেশের পর সম্রাটের আইনজীবী মাহবুবুল আলম দুলাল জানিয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা করা হয়। অস্ত্র, মাদক ও অর্থপাচারের মামলায় ইতোমধ্যে জামিন পেয়েছেন তিনি। কারাগারে ছিলেন শুধু দুদকের মামলায়। তবে সে মামলাতেও জামিন পাওয়ায় তার মুক্তিতে বাধা নেই। এরপর কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়নে একইদিন বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) তার জামিনের কাগজপত্র পৌঁছালে সেখানেই মুক্তির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়।

এরপর সে জামিনাদেশ স্থগিত ও বাতিল চেয়ে গত ১৬ মে হাইকোর্টে আবেদন জানায় দুদক। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে সম্রাটের জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আদালত। গত ১৮ মে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজহারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত ২২ মে সম্রাটের জামিন বাতিল করা হাইকোর্টের লিখিত আদেশ প্রকাশিত হয়। পরে সে আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানান সম্রাট। কিন্তু আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে গত ১০ আগস্ট সম্রাটকে জামিন না দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এরপর গত ২২ আগস্ট অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় জামিন পান ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান তাকে জামিনের আদেশ দেন। অসুস্থতার কারণে তাকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন আদালত। এরপর তিনি গত ২৬ আগস্ট মুক্তি পান। তবে তার জামিন আটকাতে পুনরায় আবেদনের বিষয়ে হাইকোর্টের অনুমতি নিলো দুদক।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.