আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে: গভর্নর

আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতি, তা কিন্তু আমদানির কারণে বেড়েছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদ্ধতিতে এগোচ্ছে, শিগগিরই এই মূল্যস্ফীতি কমে।

শনিবার (২৭ আগস্ট) ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘নবম বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্স’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, বৈশ্বিক মন্দাভাব ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বে সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর জেরে দেশে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারও বেশ চাপে পড়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে যে সংকট দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নতির জন্য সব নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতি, তা কিন্তু আমদানির কারণে বেড়েছে। আমাদেরকে তেল ও সার কিনে আনতে হয়। বিশ^বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। সার বিকল্প উপায়ে কম দরে কেনার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ সববরাহ বাড়িয়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদ্ধতিতে এগোচ্ছে, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের যে অস্থিরতা, তা দুই-তিন মাসের মধ্যে সহনীয় হয়ে আসবে।

সুশাসন নিশ্চিতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার কাজে পর্ষদের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করতে মানা করেছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এই প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ব্যাংকের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনার কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও কাজ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী তারা কাজ করবেন। তিনি বলেন, এখন থেকে পরিচালকরা ব্যবস্থাপনার কাজ করবেন না। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা নিজেরাই সেই দায়িত্ব পালন করে যাবেন, যা ইতোমধ্যে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নৈতিকতা মেনে মুনাফা করতে হবে। খেলাপি ঋণ ব্যাংকের প্রভিশন এবং তারল্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক শুধু মুনাফাই করবে না, সুশাসনের চর্চাও অব্যাহত রাখবে, নইলে পুরো খাতটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সুদহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বই এখন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় ব্যাংক ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা উঠিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এখন সুদহারের এক অংকের (৯ শতাংশ) নির্দেশনা তুলে দিলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিঘ্নিত হবে সরবরাহ। পাশাপাশি ব্যাংকেরও তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ বৃদ্ধি পাবে। তাই এই মুহূর্তে ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা উঠানোর কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবিব। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির বর্তমানে চিত্রে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নিলে বাজেটে নেওয়া বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছর বার্ষিক ব্যাংকিং কনফারেন্সের আয়োজন করে বিআইবিএম। এতে দেশি-বিদেশি ব্যাংকাররা অংশ নেন। ব্যাংক পরিচালনায় বিষয়ভিত্তিক প্লেনারি সেশনে একাধিক প্রেজেন্টেশন পেপার উপস্থাপন করা হয়। কোভিড মহামারীর কারণে গত ২০২০ ও ২০২১ সালে এ আয়োজন হতে পারেনি। দুই বছরের বিরতির পর এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনে এবার ভারত, মালয়েশিয়া ও নেপাল থেকে ব্যাংকাররা অংশগ্রহণ করছেন অনলাইনে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.