খোলাবাজারে ডলারের দাম কমলেও সংকট কাটছে না

খোলাবাজারে ডলারের দাম কিছুটা কমলেও সংকট কাটছে না। এতে বিপাকে পড়ছেন শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশগামী যাত্রীরা। সেইসাথে ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকেরা।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার খোলাবাজারে ডলারের দাম বেশ কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের তুলনায় চার টাকারও বেশি দর হারিয়েছে ডলার।

এদিন প্রতি ডলারের জন্য ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা; কিনেছেন ১১৪ টাকায়। তবে ব্যাংকগুলো আগের দামেই নগদ ডলার বিক্রি করেছে।

খোলাবাজারে গত সপ্তাহে ডলারের দর এক লাফে ১২০ টাকায় উঠেছিল। বৃহস্পতিবার তা এক টাকা কমে বিক্রি হয় ১১৯ টাকায়।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার অভিযানের মুখে খোলা বাজারে দুইভাবে ডলার বিক্রি হচ্ছে। মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও লাইসেন্স নেই এমন ব্যক্তিরাও ডলার কেনা-বেচা করে থাকেন খোলা বাজারে।

রাজধানীর মতিঝিলের দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় বর্তমানে এমন ব্যক্তি পর্যায়ের বিক্রিকারীদের উপাস্থিতি অনেক বেশি দেখা যায়।

আর অভিযান চালানোতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেশ কয়েকটি মানি চেঞ্জার ডলার-কেনা বেচা প্রায় বন্ধই রেখেছে। শুধু তাদের পরিচিতদের কাছেই বিক্রি করছেন ডলার স্বল্পতায়।

তাও সীমিত পরিসরে সর্বোচ্চ ২০০ ডলার করে বিক্রি করছেন পাসপোর্ট এনডের্সমেন্ট করে।

নিয়মের বাধ্যবাধকতা থাকলেও মানি চেঞ্জারগুলো পাসপোর্ট এনডর্সমেন্ট ছাড়াও ডলার কেনা-বেচা করে থাকে। এজন্য ব্যাংকের চেয়ে দর বেশি হলেও গ্রাহকরা খোলাবাজারেই বেশি আসেন।

অভিযান চালানোতে সব মানি চেঞ্জার প্রতিষ্টানগুলো পাসপোর্ট এনডর্সমেন্টে বেশি জোর দিচ্ছে। একদিকে চাহিদা অনুযায়ী না পাওয়া ও পাসপোর্ট এনডর্সমেন্টের কারণে অনেক গ্রাহকই মানি চেঞ্জার প্রতিষ্টান থেকে ডলার কিনতে আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন।

এতে বেচা –কেনাও কমে গিয়েছে মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর আবার ডলারের সরবরাহও কমে গিয়েছে তাদের কাছে।

কেনো ডলার কেনা-বেচা সীমিত করে ফেলছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি।

পল্টনের একটি শপিং কমপ্লেক্সে একসঙ্গে ১০টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাদের একটি হচ্ছে মানি মেক্সিমকো মানি এক্সচেঞ্জ। প্রতিষ্টানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশারফ হোসেইন বলেন, ‘ পাসপোর্ট এনডর্সমেন্ট ছাড়া ডলার বেচা ও কেনা কোনোটাই করছি না। কিন্তু ১০ জনের একজন মাত্র পাসপোর্ট নিয়ে আসছে…যারা পাসপোর্ট নিয়ে আসছে ওই সময়ে থাকলে তাদের ডলার দিতে পারছি ।’ তিনি বলেন, আজ দুপুরে ১১৫ টাকা ও বিকেলে বিক্রি করেছি ১১৪ টাকা ৫০ পয়সায়। কিন্তু যাদের লাইসেন্স নেই তাদের রেট আলাদা।’

অন্যদিকে ব্যক্তি পর্যায়ে ডলার কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িতরা যেকোনো পরিমাণের ডলার দিতে পারছে ক্রেতাদের।

গতকাল শনিবার বিকেলে ডলার বিক্রি করেছেন ১২১ টাকা। আজ তা ১২৪ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি করেছেন তারা। মানি চেঞ্জারদের চেয়ে দর বেশি দেওয়ায় ব্যক্তি পর্যায়ের এসব ব্যবসায়ীদের কাছেই ডলার বিক্রি করছেন বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরাও।

বাধ্য হয়ে গ্রাহকরাও তাদের কাছ থেকেই চড়া দামে ডলার কিনছেন ।

রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা মো. ফিরোজ। তিনি চিকিৎসার কাজে দেশের বাইরে যাবেন। ব্যাংক এবং মানি এক্সচেঞ্জে প্রয়োজনীয় ডলার না পেয়ে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দাম দিয়ে দালালদের কাছ থেকেই ডলার কিনেছেন।

এদিকে, খোলাবাজারে মৌসুমি ও ফরিয়াদের দৌরাত্ব কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছুদিন ধরেই পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে ১৩৫টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্টানে পরিদর্শন করে ৪২টিকে শো’কজ (কারণ দর্শানোর নোটিস) ও ৫টির লাইসেন্স স্থগিত করেছে। এছাড়াও ডলার কেনা-বেচায় অতিরিক্ত মুনাফা করায় ৬ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তারপরেও ডলার সংকট কাটছে না। রোববার ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক নগদ অর্থে ডলার বিক্রি করেছে ১০৫ টাকায়, ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৭ টাকায়, এনআরবি ব্যাংক ১০৮.৫০ টাকা ও দ্যা সিটি ব্যাংক বিক্রি করেছে ১০৯.৫০ টাকায়।

আর ব্যাংকগুলোর কাছে ৯৫ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এমন প্রেক্ষাপটে বাজারে ডলার সরবরাহ ও দর নিয়ন্ত্রণে আনতে রোববার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্তাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যাংকের সংগঠন ফরেইন ডিলারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(বাফেদা) ও ব্যাংকের নির্বাহীদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস, বাংলাদেশ(এবিবি)  এর সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যদি আন্তব্যাংকের মধ্যে ডলার সরবরাহ করতে পারে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, এক্সপোর্ট প্রসিড (রপ্তানি করার পর বিল নগদায়ন) দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। বাফেদা ও এবিবি একমত হয়েছে খুব দ্রুত আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন  স্থিতিশীল করার বিষয়ে।

অর্থসূচক/ মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.