লো-কস্ট জ্বালানি চায় এফবিসিসিআই

সরকারের কাছে লো-কস্ট (স্বল্প ব্যয়ে) জ্বালানি চেয়েছে বাংলাদেশের শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন। সেই সঙ্গে সরকারের লং-টার্ম (দীর্ঘমেয়াদি) কয়লাভিত্তিক জ্বালানিতে যাওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৪ অগাস্ট) রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে জ্বালানি বিষয়ক “এনার্জি সিকিউরিটি ডেভেলপমেন্ট অব দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টর” শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, পরিবেশ ধ্বংস না করেও উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদন করা যেতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কয়লা বিদ্যুৎ থেকে জ্বালানির একটা বিরাট অংশের চাহিদা মেটাচ্ছে ।

এই সময় বাপেক্স-কে (বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়াত্ত গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠান) আরও শক্তিশালী করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো উৎপাদিত গ্যাসের ৩০ শতাংশ পূরণ করলেও ৭০ শতাংশ গ্যাস পাওয়ার কথা বাপেক্স থেকে। কিন্তু আমরা তার উল্টাটা পাচ্ছি। বিদেশি কোম্পানিগুলো দিচ্ছে ৬০ শতাংশের বেশি আর বাপেক্স দিচ্ছে ৩০ শতাংশ। এই গ্যাপকে (পার্থক্য) কমিয়ে আনা দরকার এবং লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে রেশনিং করা দরকার।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, মানুষের মতো গ্যাসক্ষেত্রেরও একটা আয়ুষ্কাল রয়েছে। সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় বিদ্যুতের পরিমাণ মোট ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পলিসি হলো দেশের কৃষি ও শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা। দেশে বিদেশি কোম্পানিগুলো (নাম অনুল্লেখ করে) বিশাল অংকের একটা প্রফিট তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এরা বাংলাদেশের পেটে লাথি দিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বের জন্য একটা পরীক্ষা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য এটা আরো কঠিন পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় কাটিয়ে উঠতে হলে মুক্তিযুদ্ধের মতো আমাদের একটু ত্যাগী হতে হবে। এসিতে সভা-সেমিনার না করে বিদ্যুৎ চালিতে পাখাতে এটা করা দরকার। আমিও ফ্যান চালিয়ে এখন এই সভা করছি।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমেদ কায়কাউস লোডশেডিং প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের পলিসি হলো ডোমেস্টিক (বাসাবাড়িতে) সেক্টরে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে শিল্পে বাড়িয়ে দেওয়া। শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া।

টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ক এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট বিদ্যুৎ কনজাম্পশন হয়েছে ৭১ হাজার ৪৭১ মিলিয়ন কিলোওয়াট। এর মধ্যে শিল্পকারখানায় ২৮.৪০ শতাংশ, কৃষিতে ২.৪৩ শতাংশ, বাণিজ্যিকে ১০.৫৮ শতাংশ, বাসাবাড়িতে (ডোমেস্টিকস) ৫৬.৫৪ শতাংশ ও অন্যান্যতে ২.১৬ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রবন্ধ উপস্থাপনের এক পর্যায়ে তিনি গণমাধ্যমকে জানান যে তিতাসের উৎপাদিতে গ্যাসের ৮-৯ শতাংশ চুরি হয়ে যায়। এছাড়া বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে এলপিজি গ্যাস বিক্রি হয় বাংলাদেশে।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় বক্তারা জ্বালানি সংকট নিয়ে তথ্য প্রকাশ করেন ও নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। এই সময় বক্তরা বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্র এক্সপ্লোরেশনের (আবিষ্কার) ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ ৩টি কূপ খনন করলে ১টি গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়ে যায়। আর আমেরিকা ও ভারতের মতো দেশ ৫টি বা ১০টি কূপ খনন করলে মাত্র ১টি গ্যাসের সন্ধান পায়।

এইদিকে সভাপতি জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনায় উপস্থিত ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা জানান, বাংলাদেশে যে পরিমাণ কয়লা রয়েছে তা দিয়ে আগামী ৭০ বছর পার জ্বালানি পাওয়া সম্ভব। এটা জ্বালানির একটা দীর্ঘমেয়াদী সিকিউরিটি (নিশ্চয়তা)। অনেকেই (যেমন-পোশাক শিল্প, ইটকল, সিরামিকস) অভিযোগ করেন, গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই, ব্যাংকগুলো এলডিসি দিচ্ছে না, উৎপাদন অসম্পন্ন থাকায় পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকলেও এরপর বিদ্যুৎ থাকছে না। এই সময় শিল্পখাতকে এগিয়ে নেওয়ার আহবান জানান তারা। তবে ব্যবসায়ীদের অনুরোধ, বিদ্যুৎ নিয়ে যেনো কোনো ধরনের রাজনীতি না করা হয়।

 

অর্থসূচক/এএইচআর/এইচডি

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.