সেনাবাহিনীর পুরনো অভ্যাস মরেনি

পাকিস্তানের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ডন পত্রিকায় ‘সেনাবাহিনীর পুরনো অভ্যাস মরে নি’ শিরোনামে এক সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ারের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। সোমবার (১ আগস্ট) এই সম্পাদকীয়টি প্রকাশিত হয়।

সম্পাদকীয়তে ডন বলছে, রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে বিশ্বের কাছে পাকিস্তান নিয়ে ভুল বার্তাই পৌঁছানো হচ্ছে। দেশের রাজনীতির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ তারা কখনো প্রাতিষ্ঠানিক সীমা লঙ্ঘন করবে না বলেই আভাস দিতে চেয়েছে। কিন্তু পুরনো অভ্যাস সহজে মরে না বলে যে প্রবাদটি প্রচলিত আছে, শেষ পর্যন্ত তা-ই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। জনমনে আগেই থেকেই বদ্ধমূল থাকা কিছু ধারণা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

এদিকে নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র) ও নিক্কেই (জাপান) গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরমেনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়া। এ সময়ে পাকিস্তান সরকারকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থছাড় দিতে তিনি অনুরোধ করেন।

পাকিস্তান ও মার্কিন সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনটি করা হয়। এতে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন কমতে থাকায় ঋণখেলাপি এড়াতে পাকিস্তানকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বড় ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তান এখন এতোটাই খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে যে, সেখানকার প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক চাপ সহ্য করতে হচ্ছে। আর্থিক সংকট পূরণে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে দেশটির জনগণের। এমন পরিস্থিতিতে জেনারেল বাজওয়া আগ বাড়িয়েই আইএমএফের ঋণ ছাড়ে সহায়তা পেতে এগিয়ে এসেছেন।

এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের উপদেষ্টা তারেক ফাতেমিও ওয়েন্ডি শেরমেনকে একই বার্তা দিতে চেয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে ওয়াশিংটন সফরে ছিলেন তারেক, তখন মার্কিন উপপরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার আলাপও হয়েছে।

এদিকে ওয়েন্ডি শেরমেনের সঙ্গে ফোনালাপ করায় সামরিক বাহিনীর প্রধানের সমালোচনা করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বকালে ইমরান খানও তখন জেনারেল বাজওয়াকে পৃষ্ঠপোষক হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বাস্তবায়ন এবং চীন ও সৌদি আরবের কাছে অর্থনৈতিক সহায়তা চাইতে এসব দেশের সফরেও বাজওয়াকে সঙ্গে রেখেছিলেন ইমরান খান।

উল্লেখ্য, জেনারেল বাজওয়ার সাম্প্রতিক হস্তক্ষেপ চলমান উদ্বেগ থেকেই নিয়েছেন। সংকটে থাকা পাকিস্তানকে সহায়তার দায় থেকেই তিনি এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু তবুও পাকিস্তানের সবকিছুতে তার প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার প্রয়োগের বিষয়টিও সবার সামনে চলে এসেছে। এতে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের ক্ষমতা কার হাতে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে কী বার্তা যায়?

অর্থসূচক/এইচডি/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.