সংসদ ভবনে মশারির ভেতর শুয়ে সাংসদদের প্রতিবাদ

ভারতের সংসদ ভবন চত্বরে গান্ধী মূর্তির সামনে শুয়ে-বসে ৫০ ঘণ্টা ধরে অবস্থান-বিক্ষোভ করলেন বিরোধী সাংসদরা। এরকম দৃশ্য সম্ভবত ভারতীয় সংসদ ভবনের চত্বরে আগে কখনও দেখা যায়নি। সংসদ ভবনের আইকনিক গান্ধীজির বিশাল মূর্তির সামনে সিমেন্টের মেঝের উপর চাদর, সতরঞ্চি পাতা। তার উপর শুয়ে আছেন সাংসদরা। মশারির ঘেরাটোপের মধ্যে, যাতে মশা না কামড়ায়। শুয়ে শুয়ে তারা মোবাইল দেখছেন। কখনো বা উঠে বসে গল্প করছেন। বই পড়ছেন।

ডিএমকে সাংসদের বাড়ি থেকে মধ্যাহ্নভোজ হিসাবে ইডলি-সম্বর আসছে তো নৈশভোজের ব্যবস্থা করছে তৃণমূল ফিস ফ্রাই, তন্দুরি চিকেন দিয়ে। এর মধ্যেই বৃষ্টি নেমে যাওয়ায় সাংসদরা চাদর, বালিশ, মশারি নিয়ে ছুটেছেন সংসদের মূল প্রবেশদ্বারের সামনের পোর্টিকোতে। সারারাত তারা সেখানেই থাকলেন। এই বিরোধী সাংসদদের মধ্যে আপ, তৃণমূল, ডিএমকে, টিআরএস এবং বামেরা ছিলেন। কংগ্রেস সাংসদরা সেখানে গিয়ে তাদের নৈতিক সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। টানা দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে এই ভাবে বিক্ষোভ দেখানোর পর শুক্রবার বেলা একটা নাগাদ তাদের বিক্ষোভ শেষ হয়।

বিরোধী সাংসদদের দাবি, তারা লোকসভা ও রাজ্যসভায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবি জানাচ্ছিলেন। তার জেরেই তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। সাসপেনশনের প্রতিবাদ এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবিতে তাদের এই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন বলেছেন, ‘আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম, রাজ্যসভার ২৩ জন ও লোকসভার চারজন সাংসদের উপর থেকে সাসপেনশন তুলে নেয়া হোক। কিন্তু সরকার সেকথা শোনেনি।’

আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং টুইট করে বলেছেন, ‘গুজরাটে ২৭ বছর ধরে বিজেপি ক্ষমতায় আছে। সেখানে মদ বিক্রি আইনত বন্ধ। তারপরেও বিষমদ খেয়ে এতজন মানুষ সেখানে মারা গেছেন। তাহলে কেন মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন না? আমি বিষয়টি রাজ্যসভায় তুলতে চেয়েছিলাম। এটাই আমার অপরাধ?’

বিজেপি-র বক্তব্য, বিরোধী সাংসদদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্পিকার ও চেয়ারম্যান, ডেপুটি চেয়ারম্যান বাধ্য হয়েছেন। সঞ্জয় সিং চেয়ারম্যানের আসনের দিকে কাগজ ছুঁড়েছিলেন। বাকিরা প্ল্যাকার্ড নিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। লোকসভা ও রাজ্যসভায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো যায় না। তারা সেটাই করেছেন। প্রথম দিন থেকেই তারা সংসদের অধিবেশন অচল করার কৌশল নিয়েছেন। তারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করছিলেন বলেই শাস্তি পেয়েছেন।

বিক্ষোভ শেষ করার পর বিরোধী সাংসদরা গান্ধীজির মূর্তিতে মালা দেন। তারপর সংসদভবনের পাশে বিজয় চক পর্যন্ত মিছিল করে আসেন। তারা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন।

বিজেপি নেতা সাজিদ পুনাওয়ালা প্রশ্ন তুলেছেন, গান্ধীজির মূর্তির সামনে কী করে আমিষ খেলেন বিরোধী সাংসদরা? এরপর সামাজিক মাধ্যমে এনিয়ে প্রচুর মতামত আসতে শুরু করে।

তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র টুইট করে বলেন, ‘সাংসদরা অবস্থান-বিক্ষোভে কী খাবেন তা নিয়ে মন্তব্য করার জন্যও বিজেপি সাহায্যকারী ভাড়া করেছে। সিলি সোলস।’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির মেয়ের গুজরাটে সিলি সোলস বলে একটা রেস্তোরাঁ আছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, সেটা আসলে বেআইনি বার। সেখানে বারের কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি, অথচ তা বার হিসাবে চলে। সূত্র: ডিডাব্লিউ, পিটিআই, এএনআই

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.