‘পুঁজিবাজার দুর্বল হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদী ঋণে ব্যাংকে চাপ বাড়ছে’

পুঁজিবাজার দুর্বল হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদী ঋণের জন্য ব্যাংকে চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংক খাত নিয়ে সমসাময়িক আলোচনা সমালোচনার প্রেক্ষিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিয়ে এক ধরনের অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংক মূলত স্বল্পমেয়াদী ঋণ দেয়। সর্বোচ্চ ২/৩ বছরের জন্য চলতি মূলধনের জোগান দেয়, ব্যাংক। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্যও ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে৷ যেটা মুলত বন্ড মার্কেট বা পুঁজিবাজারে সম্ভব।

বর্তমানে ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আস্থার অভাব, অকার্যকারিতা একই সাথে বাজার অস্থির করে সেখান থেকে কিছু গোষ্ঠীর মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার কারণে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে ডলারের বাজার।

তিনি বলেন, আন্ত:ব্যাংক মুদ্রাবাজার বর্তমানে অচল৷ এটাকে সচল করতে হবে। চলমান ডলার বাজারের অস্থিরতায় হয়তো কোনো ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে আস্থা বাড়াতে হবে।

তার মতে, আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ক্ষেত্রে চালু করতে পারলে সংকট উত্তরণ সম্ভব।

এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের মতো দেশে ডলারের বাজার একেবারে ফ্রি ফ্লোর করা সম্ভব না। কিছুটা ম্যানেজ করতে হবে। আন্ত:ব্যাংক মুদ্রাবাজার সচল, আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে হলে মনে করেন তিনি।

এবিবি চেয়ারম্যান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনঃগঠনে জারি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাস্টার সার্কুলারের ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতেও জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত হবে।

সেলিম আর এফ হোসেন জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের করা নতুন পুনঃতফসিল নীতিমালা যুগান্তকারী পদক্ষেপ, এটা কার্যকরী হবে। এখানে ব্যাংক খাতকে ছাড় দেয়া হয়নি।

এবিবি চেয়ারম্যান বলেন,ঋণ পুনঃতফসিল সব দেশেই হয়। কিন্তু কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি এটা অনুমোদন করে না। এমনটা বিশ্বের কোথাও নেই। ঋণ গ্রহীতাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক চেনে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয়।  পৃথিবীর কোনো দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল করে না, এটা ব্যাংকারদের কাজ। আগে ঋণ পুনঃতফসিল হতে ৩/৪ মাস সময় লাগত। এখন ঋণ পুনঃতফসিল হবে সর্বোচ্চ ৭ দিনে। এতে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি ভালো হবে। ঋণ পুনঃতফসিল সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনটি ব্যাংকারদের জন্য দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহি করবে। যদি ব্যাংকগুলোতে সুশাসন এবং দক্ষ জনবল থাকে তাহলে অবশ্যই সেই ব্যাংক এই সার্কুলারের মাধ্যমে ভালো ফলাফল করবে।

যদি ব্যাংকে সুশাসন না থাকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়েও গভর্নর কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। ১০ টা সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের তালিকা করে পরিদর্শন ও তদারকি আরও বাড়ানো হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নজর রাখতে বলেছেন গর্ভনর। অনিয়ম হলে সেখানে শূন্য সহনশীলতা দেখানো হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.