চবির আরও ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

যৌন হয়রানি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) যৌন নিপীড়নের ঘটনায় আরও চারজন ছাত্রকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককেও সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুরের দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান। এ সময় চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. বেনু কুমার দে এবং প্রক্টর রবিউল ইসলাম ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন ।

বহিষ্কৃতরা হলেন- আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. জুনায়েদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুবেল হাসান, দর্শন বিভাগের একই বর্ষের ইমন আহাম্মেদ ও আরএইচ রাজু। তারা চারজনই ২০১৯-২০২০ সেশনের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিএফসি গ্রুপের অনুসারী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া তিনটি ঘটনার অভিযোগ জমা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টির যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেলে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সেই তিন অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে তিন নম্বর অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও চার শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে সেল।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এসএম মনিরুল হাসান বলেন, পুরোনো তিন অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছি আমরা। দ্রুত এগুলো কার্যকর হবে।

এছাড়া গত ১৭ জুলাইয়ের যৌন নিপীড়নের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের চার দাবি মেনে নেওয়ারও দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ১৭ জুলাইয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি একজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া চবির দুই শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিরাগতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ নিরাপদ। আমার ছাত্রী যে হেনস্থার শিকার হয়েছে, এজন্য আমাদেরও কষ্টের শেষ নেই। আমরা নিশ্চিত করছি ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ।

সংবাদ সম্মেলনে চবিতে চলমান আন্দোলনের চার দফা দাবির মুখে সেলে আটকে থাকা তিন অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন উপাচার্য। প্রথম অভিযোগ, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সস বিভাগের শিক্ষক এটিএম রফিকুল হক এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্থা করেনে। তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি দেয়নি সেল। লিখিতভাবে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দ্বিতীয় অভিযোগ, বেগম খালেদা জিয়া হলের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতন করেন রসায়ন বিভাগের এক ছাত্র। তাকেও কোনো শাস্তি না দিয়ে লিখিতভাবে সতর্ক করেছে সেল।

তৃতীয় অভিযোগ, গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুই ছাত্রী ক্যাম্পাসের বাসায় ফিরছিলেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে তাদের পথ আটকে জিজ্ঞাসাবাদ ও অশালীন মন্তব্য করেন চার ছাত্র। ছা্ত্রী উত্তর না দিলে তাকে শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে হেনস্তা করা হয়। এ অভিযোগেই ওই চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হল।

গত ১৭ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল এলাকায় এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের পর আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ দিতে গেলে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বাধা দেন বলেও অভিযোগ এসেছে। পরে ভুক্তভোগী হাটহাজারী মডেল থানায় অজ্ঞাত পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই ঘটনার প্রতিবাদ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। এর একদিন পর বুধবার মামলা করেন হাটহাজারী থানায়।

পরবর্তীতে শুক্রবার (২২ জুলাই) ছয়জনকে শনাক্ত করেছে র‌্যাব। এদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনাক্ত ছয়জনের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ঘটনার নেতৃত্বদাতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. আজিম হোসাইন (২৩) চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.