রোহিঙ্গা গণহত্যা: আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ

রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় মিয়ানমারের আপত্তি খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে)। ফলে জাতিসংঘের আদালতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার বিচারকাজ এগিয়ে নিতে আর কোনো বাধা থাকলো না। খবর এপির।

এর আগে, গত ফেব্রুয়াারিতে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের প্রাথমিক আপত্তির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার (২২ জুলাই) স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায়) এর রায় পড়ে শোনান আইসিজে সভাপতি বিচারপতি জোয়ান ই ডনোগু।

মিয়ানমারের দাবি ছিল, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার করা এই মামলার বিচার করার এখতিয়ার নেই আইসিজের। তবে শুক্রবারের রায়ে আন্তর্জাতিক আদালত বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার করার পুরো এখতিয়ার রয়েছে তাদের।

২০১৭ সালে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে, ধর্ষণ ও হত্যা করে জাতিগত নিধন অভিযান চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেসময় নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগেও বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল মিয়ানমারের কয়েক লাখ মুসলিম সংখ্যালঘু। তারা এখনো তাদের জন্মভূমিতে ফিরতে পারেনি।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে ২০১৯ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। ওই বছরের ১০-১২ ডিসেম্বর এই মামলায় প্রথমবার প্রাথমিক শুনানি হয়। এতে গাম্বিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির আইন ও বিচার মন্ত্রী আবুবকর তামবাদু। আর মিয়ানমারের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি।

২০২০ সালে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার দলিল দাখিল করে গাম্বিয়া। সেখানে দেখানো হয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কীভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে।

তবে এ মামলায় আইসিজের এখতিয়ার নেই দাবি করে একপর্যায়ে চ্যালেঞ্জ জানায় মিয়ানমার সরকার। সু চি কারাবন্দি থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে এর শুনানিতে অংশ নেন মিয়ানমার জান্তার প্রতিনিধিরা। তাদের দাবি, যেহেতু আইসিজে কেবল দুই রাষ্ট্রের মধ্যকার মামলার শুনানি করে এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা দায়ের করেছে গাম্বিয়া, তাই এটি খারিজ করে দেওয়া উচিত।

মিয়ানমার আরও দাবি করে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে গাম্বিয়ার যেহেতু সরাসরি কোনো যোগসূত্র নেই এবং মিয়ানমারের সঙ্গেও গাম্বিয়ার আগে কোনো আইনি দ্বন্দ্বও ছিল না, তাই পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি আন্তর্জাতিক আদালতে এই মামলা করতে পারে না।

তবে শুক্রবারের রায়ে মিয়ানমারের প্রত্যেকটি দাবিই খারিজ করে দিয়েছেন দ্য হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। আইসিজে সভাপতি বলেছেন, গণহত্যা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী যেকোনো রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের সামনে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অন্য রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্ব নিতে পারে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তি বিধানে ১৯৮৪ সালে স্বাক্ষরিত কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে গাম্বিয়া। ১৯৫৬ সালে ওই ‘জেনোসাইড কনভেনশনে’ সই করেছিল মিয়ানমার। গাম্বিয়াও এতে স্বাক্ষরকারী দেশ।

গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, মামলাটি অবশ্যই এগিয়ে নেওয়া উচিত এবং এটি দায়ের করেছে তার দেশ, ওআইসি নয়। সেদিন তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা কারও প্রক্সি (প্রতিনিধি) নই।

রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় গাম্বিয়াকে সমর্থন করছে বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ। এছাড়া, আইসিজে’তে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে গাম্বিয়াকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ওআইসি।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.