তৃতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিল টাইগাররা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আগের দুই ম্যাচের মত তৃতীয় ম্যাচেও দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আর তাতে এক ম্যাচ হাতে রেখে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে টাইগাররা।

সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৬ উইকেটে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছিল ৯ উইকেটে। গায়ানায় শনিবার তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের ৪ উইকেটে হারিয়েছে তামিম ইকবালের দল।

আগে ব্যাট করতে নেমে তাইজুল ইসলামের ৫ উইকেটের কল্যাণে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৭৮ রানে বেঁধে ফেলতে সক্ষম হয় সফরকারীরা। মাত্র ১৭৯ রানের লক্ষ্য টপকাতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি টাইগারদের। লিটন দাসের ফিফটি বাংলাদেশের জয়কে বেশ সহজ করে দেয়। এই ম্যাচ জিতে ক্যারিবীয়দেরকে তাদের ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ করে দেয় বাংলাদেশ।

সব মিলিয়ে প্রতিপক্ষকে ১৬ বার ‘বাংলাওয়াশ’ করলো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দেশের বাইরে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪-এ। এ নিয়ে উইন্ডিজকে তৃতীয়বার ধবলধোলাই করল বাংলাদেশ।

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি সফরকারীদের। ইনিংসের সপ্তম ওভারে আউট হন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। যদিও থিতু হতে বেশ সময় নেন তিনি। ১৩ বল খেললে ফেরেন ১ রানে। আলজারি জোসেফের আউটসাইড অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

দ্বিতীয় উইকেটে তামিম-লিটনের ৫০ রানের জুটি দলকে বিপদমুক্ত করে। তবে অর্ধশতকের দিকে ছুটতে থাকা তামিম হঠাৎ যেন মনোযোগ হারিয়ে বসেন। বাঁহাতি স্পিনার গুদাকেশ মটিকে ফাইন লেগে সুইপ করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন। খানিক দৌড়ে এসে দারুণ ক্যাচ নেন আকিল। ৪ চারে ৫২ বলে ৩৪ রান করেন তামিম। তবে অধিনায়ক তামিম না পারলেও ঠিকই ফিফটি তুলে নেন লিটন। ৬২ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ অর্ধশতকের দেখা পান এই ডানহাতি।

তবে সেই ইনিংসটাকে আর বেশি টানতে পারেননি লিটন। মটিকে সোজাসুজি খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন তার হাতেই। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ ক্যাচ নেন এই তরুণ। ৬৫ বলে ৫০ রান করে ফেরেন লিটন। যেখানে ৫টি ও ছয়ের মার ১টি। এক বল পরেই বিদায় নেন নতুন ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন। মটিকে সামনে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন আফিফ, কিন্তু বল টার্ন করে উইকেটে লাগে। ২ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি আফিফ।

আফিফের আউটে দলীয় ৯৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ছন্দপতন হয় সফরকারী শিবিরে। খানিক পর মোসাদ্দেক হোসেন সাজঘরে ফিরলে পরাজয়ের শঙ্কাও মাথাচাড়া দেয়। মটিকে এগিয়ে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েন তিনি। ১ চার ও ১ ছয়ে ২৫ বলে ১৪ রান করেন মোসাদ্দেক। এতে দারুণ বোলিংয়ে একাই ৪ উইকেট তুলে নেন মটি।

তবে সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ষষ্ঠ উইকেটে নরুল হাসান সোহানের সঙ্গে গড়েন গুরুত্বপূর্ণ ৩১ রানের জুটি। দলীয় ১৪৭ রানের সময় রান আউটে কাটা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। তিনি সাজঘরে ফেরেন ৬২ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে।

এরপর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে দলের জয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারেন সোহান। ১০ বল হাতে রেখেই ৪ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ। যেখানে সোহান ৩৮ বলে ৩২ এবং মিরাজ ৩৫ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে টস জিতে ফিল্ডিং করতে নামা বাংলাদেশ দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তাইজুল। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের ব্রেন্ডন কিংকে বোল্ড করেন তিনি। তার টার্ন করা বলে পরাস্ত হয়ে ১০ বলে ৮ রানে ফেরেন কিং। নিজের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার বানান শেই হোপকে। তিনি আউট হন ২ রান করে। ফলে ১৫ রান তুলতেই সাজঘরে দুই ওপেনার। পরের ওভারেই আক্রমণে মুস্তাফিজুর রহমান। তার বাঁহাতি পেসের ছোবলে লেগবিফোর হন শামার ব্রুকস। ৪ রান করেন তিনি।

১৬ রান ৩ উইকেট হারায় উইন্ডিজ। সেখান থেকে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন কার্টি আর পুরান। চতুর্থ উইকেট পার্টনারশিপে দুইজন যোগ করেন ৬৭ রান। ইনিংসের ২৭তম ওভারে নাসুমকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে তামিমের হাতে কার্টি ৬৬ বলে ৩৩ রান করে ধরা পড়লে ভাঙে এই জুটি।

এরপর আবার দৃশ্যপটে তাইজুল। এবার শিকার বানালেন হার্ডহিটার রভম্যান পাওয়ালকে। উইকেট থেকে বেরিয়ে জায়গা করে খেলতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হন এই ডানহাতি। ২৮ বলে ১৮ রান করেন তিনি। পাওয়েলের পর তাইজুল স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ফেরান ৬ রানে থাকা কিমো পলকে। পরে অধিনায়ক নিকোলাস পুরানকে তুলে নিয়ে ২৮ মাস পর ওয়ানডেতে ফিরেই ফাইফারের স্বাদ পান এই বাঁহাতি স্পিনার।

৪টি চার ও ২ ছয়ে ১০৯ বলে ৭৩ রান করেন পুরান। মাঝে অবশ্য প্রথম উইকেটের দেখা পান অফ স্পিনার মোসাদ্দেক। বলের লাইন মিস করে আকিল হোসাইন ১ রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে ফেরেন। পরে শেষ উইকেটে শেইফার্ড ও জোসেফের ২৫ রানের পার্টনারশিপে দলীয় সংগ্রহ বাড়িয়ে নেয় স্বাগতিকরা। ৪৯ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তাদের ইনিংস থামে ১৭৮ রানে। সফরকারীদের হয়ে তাইজুল ৫, নাসুম ও মুস্তাফিজ নেন ২টি করে উইকেট।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.