মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই প্রধান কাজ: নতুন গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই হবে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ। এক্ষেত্রে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করবে। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।

ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্ম দিবসের সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ১২তম  গভর্নর হিসেবে যোগ দিয়েছেন আব্দুর রউফ তালুকদার।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতি তা মূলত বাজারে অতিরিক্ত টাকার সরবরাহের কারণ নয়,  বরং অতিরিক্ত আমদানি ব্যয়ের কারণে।

বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় মাত্রাতিরিক্ত আমদানি ব্যয় মেটানোর কারণেই এই মূল্যস্ফীতি। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক একসাথে কাজ করবে।

মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে তুলে ধরে আব্দুর রউফ বলেন, ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। সরকারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি আমাদের অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা না। বিশ্ববাজারে পণ্যর উচ্চ মূল্যের কারণেই উর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির পারদ।

আমি মনে করি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন নতুন গভর্নর। এরমধ্যে রয়েছে – এক্সচেঞ্জ রেট ঠিক রাখা ও রিজার্ভ ধরে রাখা, খেলাপি ঋণ ও মুলধন ঘাটতি পুরণ করে আর্থিক স্থিতিশীলতা ঠিক রাখা, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা, বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়িয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা অন্যতম৷

ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সুদহার তুলে নেয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ক্যাপ উঠে গেলেই যে সুদের হার কমবে, তার কোনো মানে নেই।

তিনি বলেন, বর্তমান সুদহারে ব্যাংকগুলোর অবস্থা খারাপ নেই।  সুদহার যখন ১৬/১৭ ছিল তখনই খেলাপি ঋণ অনেক বেশি ছিল। এখন বরং অনেক কম।

বৈশ্বিক বৈরি পরিস্থিতির মধ্যে গভর্নর হিসেবে যোগদান করেছেন কোনো চাপ অনুভব করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চাপের মধ্যে কাজ করে এসেছি৷ যে পদে কাজ করে আসছি সেটাতেও চাপ ছিল। এজন্য নতুন কোনো চাপ অনুভব করছি না। চাপে ছিলাম এতোদিন। প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন খুব চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আছি।

আগামী চার বছর পরে বাংলাদেশ ব্যাংককে কেমন দেখতে চান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে ইনটেলেকচুয়াল ইন্সটিটিউশনে রূপান্তর হতে দেখতে চাই।

বাংলাদেশ ব্যাংককে পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই। এখনও পেশাদার আছে, তবে এটাকে আরও উৎকর্ষর মধ্যে দেখতে চাই।

বাংলাদেশ ব্যাংক যেন শীর্ষ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করতে পারে, চার বছর পর এটাই আমার লক্ষ্য।

ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সংস্কার প্রস্তাব কতটা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিদেশি অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার পরেও আমরা পদ্মা সেতু করতে সক্ষম হয়েছি।

আমরা আইএমএফকে বলেছি, বাজেট বক্তৃতায় যা বলা হয়েছে, সেভাবে রির্ফম করা হবে। আইএমএফ কি বললো সেটা নয়, বাজেটে তুলে ধরা প্রস্তাব অনুযায়ী  সংস্কার করবে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে কি না ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন আইনে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দিষ্ট ক্ষমতা দেয়া আছে। এসব আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ করতে কোথাও কোনো বাধা নেই।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.