যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

একের পর এক মন্ত্রী ও কর্মকর্তা পদত্যাগ করার পর সিদ্ধান্ত বদল করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পদত্যাগ করেছেন। তিনি দলের নেতার পদ ছেড়ে দিয়েছেন। জনসন জানিয়েছেন, পার্লামেন্টারি পার্টি নতুন নেতা ও নতুন প্রধানমন্ত্রী চাইছে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে এসে জনসন জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো কর্মসূচি সামনে আসবে। নতুন নেতা নির্বাচন হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। জনসন বলেছেন, বিশ্বের সেরা পদ ছেড়ে দিতে হওয়ায় তিনি দুঃখিত। বিবিসি জানাচ্ছে, আগামী অক্টোবরে দলের বার্ষিক সম্মেলনে নতুন নেতা দায়িত্ব নেবেন।

জনসন জানিয়েছেন, তিনি মন্ত্রীদের বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন, সরকার যাতে চলে তার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। নিজের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করার সময় জনসন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার সাফল্য়ের কথাও শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্রেক্সিট, করোনার মোকাবিলা, সবচেয়ে আগে লকডাউন তুলে নেওয়া, রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউরোপের নেতৃত্ব দেওয়ার কাজ তিনি করেছেন। তবে সেই সঙ্গে এটাও স্বীকার করে নিয়েছেন, অনেক পরিকল্পনা তিনি রূপায়ণ করতে পারলেন না। তার জন্য তিনি দুঃখিত। তবে তার আশা, নতুন প্রধানমন্ত্রী সেই কাজ শেষ করবেন। আর তিনি নতুন নেতাকে সাহায্য করবেন।

এদিকে নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস এবং সদ্য পদত্যাগী অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বেন ওয়ালেস দলের এমপি-দের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয়। ঋষি সুনাককে জনসনই অর্থমন্ত্রী করেছিলেন। তারপর তার দ্রুত উত্থান হয়েছে। ঋষির ঠাকুর্দা ভারতের পাঞ্জাব ছেড়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস শুরু করেছিলেন।

নিয়মানুযায়ী, প্রথমে রক্ষণশীল দল দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বী বেছে নেবে। তারপর তাদের মধ্যে থেকে একজনকে নেতা বাছা হবে। তিনিই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন।

বুধবার জনসনের দুই গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী সাজিদ জাভেদ এবং ঋষি সুনাক মন্ত্রীপদ থেকে পদত্যাগ পত্র দিয়েছিলেন। তারপরেও জনসন পার্লামেন্টারি কমিটিতে জানিয়েছিলেন, তিনি পদত্যাগ পত্র দেবেন না। কিন্তু তারপর একের পর এক মন্ত্রী ও কর্মকর্তা পদত্যাগ করতে শুরু করেন। তার প্রতি এই অনাস্থার প্রকাশ দেখে চাপের মুখে পড়ে জনসনও অবশেষে সিদ্ধান্ত বদল করলেন। সবমিলিয়ে মোট ৫৭ জন মন্ত্রী ও কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।

এর আগে জনসন বলেছিলেন, ‘আমি এখন ইস্তফা দিচ্ছি না। কারণ, দেশ এখন নির্বাচন চায় না। আমি সেই সব বিষয়ের উপর নজর দিচ্ছি যা দেশের জন্য জরুরি। ইউরোপে গত ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় যুদ্ধের দিকে আমি মনোনিবেশ করছি।’

পার্লামেন্টারি কমিটিতে জনসন বলেছেন, ‘আমি সব সমস্যার মুখোমুখি হতে চাই, পালিয়ে যেতে চাই না।’ এরপর তিনি আবাসন মন্ত্রী মাইকেল গভকে ডেকে পাঠিয়ে ইস্তফা দিতে বলেন। ব্রেক্সিট নিয়ে মাইকেল গভ সরকারের তরফে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু বুধবার তিনি বলেন, দেশ ও দলের স্বার্থে জনসনের পদত্যাগ করা উচিত।

জনসনের পার্লামেন্টের সচিব জেমস ডাডরিজ স্কাই নিউজকে জানান, ‘মাইকেল গভকে বরখাস্ত করেছেন জনসন। প্রধানমন্ত্রী রীতিমতো চনমনে আছেন এবং তিনি লড়াই চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।’

করোনাকালে বিধি ভেঙে জনসন পার্টি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার জন্য একটি ক্ষেত্রে তিনি জরিমানাও দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি এমন একজনকে চিফ হুইপ করেছেন, যার বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। তা জেনেও জনসন তাকে চিফ হুইপ করায় দলে প্রচুর জলঘোলা হয়েছে।

পদত্যাগ করার পর সাবেক মন্ত্রী সাজিদ জাভেদ পার্লামেন্টে বলেন, তিনি ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বরাবর টিম প্লেয়ার হিসাবে কাজ করে এসেছেন। কিন্তু যখন ক্যাপ্টেন ভালো হয়, তখন টিমও ভালো হয়। গত কয়েক মাস ধরে যা হচ্ছে, তাতে টিমে থাকা আর তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।

গত মাসেই দলের মধ্যে আস্থা ভোটে জিতেছেন জনসন। তখন দেখা গিয়েছিল, দলের বেশ কিছু এমপি তার কাজে সন্তুষ্ট নন। করোনার বিধি লঙ্ঘন করে একাধিক পার্টি আয়োজন করে সমালোচিত হয়েছিলেন বরিস জনসন। এজন্য প্রকাশ্যে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে পদত্যাগের চাপে ছিলেন তিনি। অবশ্য, তিনি পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে উতরে যান।

তবে সরকার পরিচালনায় বরিস জনসনের সক্ষমতা নিয়ে নিজ দল ও দলের বাইরে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন তিনি। রক্ষণশীল দলের এমপি ক্রিস পিঞ্চারের বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন বরিস জনসন। এর পরও তাকে সরকারের ডেপুটি চীফ হুইপ করেন প্রধানমন্ত্রী জনসন।

এ ঘটনা প্রকাশ্যে এলে আবারও ক্ষমা চান বরিস জনসন। তবে নিজ দল থেকেই এবার তার পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এ নিয়ে ভীষণ চাপে রয়েছেন তিনি। এর মধ্যেই সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর পদ ছাড়ার ঘোষণা তার ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। সূত্র: ডিডাব্লিউ, পার্সটুডে, এপি, এএফপি, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.