বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে আলোকসজ্জা না করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, দোকানপাট ও বিপণিবিতান, অফিস-আদালত এবং বাড়িঘরে আলোকসজ্জা না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (৬ জুলাই) গণভবনে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস রানা এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় বৈশ্বিক সংকট পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানিয়েছেন।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় করতে রাত ৮টার পর থেকে দোকান, বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে গত ১৯ জুন সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল সরকার। ২০ জুন থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হয়।

তবে ঈদুল আজহা সামনে রেখে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত দোকানপাট, মার্কেট, বিপণিবিতান বন্ধের সময় দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে ২২ জুন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে ১০ জুলাইয়ের পর রাত ৮টায় দোকানপাট-বিপণিবিতান বন্ধ করতে হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এক বিবৃতিতে জানান, গ্যাস ও জ্বালানি তেল সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় চলমান লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ বেশিদিন থাকবে না। এ সময় তিনি সার্বিক বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তুলে ধরে গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন।।

এদিকে বুধবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম বাড়ছে। ভোজ্য ও জ্বালানি তেল ছাড়াও বিদ্যুৎ, সার, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ডিজেলের ওপর আমাদের আমদানি নির্ভরতা রয়েছে। আগামী দিনে ডিজেলের দাম আরও বাড়তে পারে। ভবিষ্যত ফাইন্যান্সিয়াল মেকানিজম কী হবে, এটার উত্তর কেউ দিতে পারছে না।

শেখ হাসিনা বলেন, সবকিছুর দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সচল রাখতে আমাদের নিজস্ব সীমিত গ্যাসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এমনকি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সচল রাখাটাই একটা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে গেছে। এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, বিদ্যুতে ভর্তুকি দিচ্ছি। তারপরও আমরা সাধারণ মানুষকে নগদ অর্থ দিচ্ছি। উপকারভোগীদের কার্ড করে দিচ্ছি, রেশন কার্ডের মতো পারিবারিক কার্ড দিচ্ছি। যেখানে স্বল্পমূল্যে প্রায় এক কোটি মানুষের জন্য কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। যেন তারা কম দামে খাদ্যপণ্য কিনতে পারে। মানুষের কল্যাণে যা যা করার সব ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমদানি পণ্যে আমরা বিশাল অংকের ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি, এটা কতদিন দিতে পারবো। কারণ, আমাদের মানুষকে খাদ্য দিতে হবে, চিকিৎসা দিতে হবে। গৃহহীনদের ঘর দিতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের মানুষের প্রতি নজর দিতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বাজেট ধরা হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি ভর্তুকি না কমাই সরকারের টাকা আসবে কোত্থেকে। তার মানে যুদ্ধের কারণে আমাদের সবকিছুই এখন…। বিদেশেও সব পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যেগুলো আমাদের কিনে আনতে হয়। ভোজ্যতেলও আমাদের বাড়তি দামে কিনে আনতে হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এক্ষেত্রে সবাইকে আহ্বান করেছি, প্রত্যেককে নিজ নিজ সঞ্চয়টা বাড়াতে হবে। খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে হবে। যতটুকু পারা যায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে। আমাদের এখন একটাই উপায় কখন কোন এলাকায় লোডশেডিং হবে সেটার একটা রুটিন তৈরি করা। যেন মানুষ প্রস্তুত থাকতে পারে। মানুষের কষ্টটা যেন আমরা লাঘব করতে পারি। সে বিষয়ে আমাদের এখন নজর দিতে হবে। আমি আশা করি, দেশবাসী আমাদের সহযোগিতা করবেন।

অর্থসূচক/এইচডি/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.