পণ্য আমদানিতে ঋণপত্রের মার্জিন বেড়েছে

ডলারের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে বিলাসী পণ্য আমদানিতে আরও কঠোর হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জাতীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ঋণপত্রের  মার্জিন বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে অন্যান্য পণ্য আমদানির মার্জিনও।

সোমবার (৪ জুলাই) মার্জিন বাড়ানো সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, এখন থেকে বিলাসবহুল পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে হলে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে। এতদিন ৭৫ শতাংশ মার্জিন ছিল।

বিলাসী পণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের ঋণপত্রের মার্জিনও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য এলসির ক্ষেত্রে মার্জিন হার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে এখানেই শেষ নয়। আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বন্ধ করা হয়েছে ঋণপত্রের মার্জিন পরিশোধে ঋণ-সুবিধা। এখন থেকে আমদানির এলসির নগদ মার্জিন গ্রাহকের নিজের অর্থ থেকে পরিশোধ করতে হবে; এজন্য কোনো ধরনের ঋণ ব্যাংক পাবে না।

তবে শিশু খাদ্য, জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষি খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানির ঋণপত্র এ নির্দেশনার বাইরে থাকবে।

আলোচিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব এবং বহির্বিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুসংহত রাখার লক্ষ্যে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার পুনঃনির্ধারণ করা হলো।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মোটরকার (সেডানকার, এসইউভি,এমপিভি ইত্যাদি), ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার, মূল্যবান ধাতু ও মুক্তা, তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্রসাধনী, আসবাবপত্র ও সাজসজ্জা সামগ্রী, ফল ও ফুল, নন সিরিয়াল ফুড যেমন অ-শস্য খাদ্যপণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য ও পানীয়; যেমন টিনজাত খাদ্য, চকোলেট, বিস্কিট, জুস, সফট ড্রিংকস ইত্যাদি, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়, তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্যসহ অন্যান্য বিলাসজাতীয় পণ্যের আমদানি ঋণপত্র জন্য ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে।

অন্যদিকে অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্যের ঋণপত্রের জন্য ৭৫ শতাংশ মার্জিন রাখতে হবে।

তবে শিশুখাদ্য, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বীকৃত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, উৎপাদনমুখী স্থানীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরাসরি আমদানি করা মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল, কৃষি খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য এবং সরকারি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ওপর কোনো মার্জিন আরোপ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ১০০ শতাংশ ও ৭৫ শতাংশ মার্জিনে আমদানি করা পণ্যের ঋণপত্র স্থাপনের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মার্জিন গ্রাহকের নিজস্ব উৎস থেকে দিতে হবে। নগদ মার্জিনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আমদানিকারককে কোনো ঋণ দিতে পারবে না।

এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এটি বলবৎ থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে আজ ডলার বিক্রি করেছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা দরে। এক মাস আগেও এ দর ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে দেশীয় মুদ্রা টাকার মান কমেছে ৭ টাকা। তবে বিভিন্ন ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম আরও বেশি।

এদিকে আমদানির চাপে বহির্বিশ্বের সঙ্গে রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ছাড়িয়েছে তিন হাজার ৮১ কোটি ডলার। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও ১৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

অন্যদিকে প্রবাসী আয়ের প্রবাহও সন্তুষজনক নয়। সর্বশেষ অর্থবছরে এই আয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

সামগ্রিক বাস্তবতায় আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা জরুরী মনে করছে সরকার। আর এর আলোকেই নতুন সব শর্ত আরোপ করা হয়েছে ঋণপত্রে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.