বুয়েটে চান্স পেয়েছে আবরার ফাহাদের ছোটভাই

নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার বহুল আলোচিত আবরার ফাহাদ রাব্বীর ছোটভাই আবরার ফাইয়াজ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) চান্স পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত রেজাল্টে আবরার ফাইয়াজ ৪৫০তম হয়ে যন্ত্রকৌশল বিভাগে চান্স পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আবরার ফাইয়াজ বলেন, ইচ্ছা আছে ভর্তি হওয়ার। তারপরও পরিবারের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো।

প্রসঙ্গত, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি।

ওই ঘটনায় নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ বাদি হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।

আলোচিত এ হত্যার ঘটনায় গত ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল (২৪), মো. অনিক সরকার ওরফে অপু (২২), মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত (২৩), ইফতি মোশাররফ সকাল (২০), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২৩), মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ (২০), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (২১), খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম অরফে তানভির (২১), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২১), মো. শামীম বিল্লাহ (২১), মো. সাদাত এএসএম নাজমুস সাদাত (২১), মুনতাসির আল জেমী (২০), মো. মিজানুর রহমান মিজান (২২), এসএম মাহমুদ সেতু (২৪), সামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম (২০) জেল আপিল করেছেন।

বাকি আসামি এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম (২০), মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল প্রকাশ জিসান (২২), মুজতবা রাফিদ (২১) পলাতক রয়েছেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- অমিত সাহা (২১), ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (২১), মো. আকাশ হোসেন (২১), মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩) ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হোরায়রা (২১)। তবে যাবজ্জীবন দণ্ডিতরা আপিল করেছেন কিনা তা জানা যায়নি।

এদিকে গত ৬ জানুয়ারি এ মামলার ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা অনুমোদনের জন্য মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। এছাড়া দণ্ডিত আসামিরা উচ্চ আদালতে ফৌজদারি আপিল এবং জেল আপিল করতে পারেন। পরে ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আসামি সেতুর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক ফয়সাল ও ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার শিউলী এই আপিল দায়ের করেন।

আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক ফয়সাল জানান, বুয়েটের আবরার হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এস এম মাহমুদ সেতুর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ। এখন মামলাটির পেপারবুক তৈরি হলে আপিলের বিষয়ে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।

গত ১৮ জুন বুয়েট ক্যাম্পাসে ৬ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ও বিকেল দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রকৌশল বিভাগ সমূহ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের জন্য ‘মডিউল-এ’ সকাল ১০টা-১২টা ও প্রকৌশল বিভাগসমূহ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগের জন্য ‘মডিউল-বি’ দুই শিফটে বেলা ২টা থেকে ৩টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।

প্রকৌশল, পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল এবং স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদ সমূহের অধীনে ১২টি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হবে। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য এলাকার ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীভুক্ত প্রার্থীদের জন্য প্রকৌশল বিভাগ সমূহ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের জন্য মোট ৩টি ও স্থাপত্য বিভাগে ১টি সংরক্ষিত আসনসহ সর্বমোট ১ হাজার ২৭৯টি আসনের বিপরীতে প্রার্থী সংখ্যা ১৭ হাজার ৩৪ জন।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.