নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ

অর্থবছর ২০২২-২৩

অব্যাহতভাবে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। অস্থির বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। আবার নতুন করে আসছে করোনার ধাক্কা। রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বৈশ্বিক প্রভাব। পাশাপাশি দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। সব মিলিয়ে এক কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের মানুষ। এই সংকটে বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতে নতুন কৌশল অর্থাৎ মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আজ বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে নতুন এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, প্রধান অর্থনীতিবিদ, নির্বাহী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকবেন। তারা মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করবেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিবেন।

বর্তমান গভর্নরের মেয়াদে এটি তার শেষ মুদ্রানীতি ঘোষণা। আগামী ৩ জুলাই গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তাই প্রতি বছর জুলাই মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও এবার তা এগিয়ে আনা হয়েছে।

এর আগে, বছরে দুটি মুদ্রানীতি প্রণয়নের রীতি থাকলেও গভর্নর ফজলে কবির বছরে একবারই মুদ্রানীতি প্রণয়নের ঘোষণা দেন। করোনার কারণে গত দুই বছর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া শুধু ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এবার মুদ্রানীতি সরাসরি ঘোষণা করবেন গভর্নর ফজলে কবির। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সামনে রেখেই মুদ্রানীতি দেয়া হচ্ছে।

এরই মধ্যে গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি উঠেছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এজন্য মূল্যস্ফীতি সরকার নির্ধারিত মাত্রায় সীমিত রাখা চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা।

এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান বলেন, করোনার পর অর্থনীতি পুনুরুদ্ধারে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডকে যাতে নিরুৎসাহিত না করা হয় সেদিকে মুদ্রানীতির দৃষ্টি থাকবে। এবারের মুদ্রানীতি হবে সতর্কতামূলক। পুরোপুরি সংকোচন বা সম্প্রসারণমূলক নয়।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মুদ্রনীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা প্রাক্কলন করা হয় ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত এপ্রিল পর্যন্ত ঋণ বেড়েছে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ফলে আগামী অর্থবছরের জন্যও এরকম প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হতে পারে।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত সার্বিক মূল্যস্ফীতি আট বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছে হয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। এ কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা ছিল ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। মে পর্যন্ত ১১ মাসে সরকারি ঋণ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫৯ শতাংশ। অর্থবছরের শেষ সময়ে দ্রুত তা বাড়ছে।

ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে তা মূল্যস্ফীতি উসকে দিতে পারে বলে এটিও মুদ্রানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর বেসরকারি খাতের জন্য ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা ঋণের সংকুলান রেখে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এপ্রিল শেষে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে চলতি মুদ্রানীতিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ‘সম্প্রসারণ ও সংকুলানমুখী’।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.