জাল নোট প্রতিরোধে পশুর হাটে থাকবে ব্যাংকের বুথ

সব শাখায় নোট শনাক্ত করার ভিডিও দেখানোর নির্দেশ

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা ২০২২ উপলক্ষ্যে সারাদেশে সরকার অনুমোদিত সব কুরবানির পশুর হাটে জালনোট প্রতিরোধে ব্যাংকের বিশেষ বুথ থাকবে। এসব বুথে জালনোট শনাক্ত করার মেশিনসহ অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। হাট চলাকালীন সার্বক্ষণিক চালাতে হবে ব্যাংকের বুথের সেবা। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৯ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট এই বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। ব্যাংকগুলো এ প্রসঙ্গে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেগুলো ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, কুরবানির পশুর হাটে জালনোট প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ আগে থেকেই সীমিত আকারে ব্যাংকের বিশেষ বুথ স্থাপনের ব্যবস্থা করছে। এবার সারাদেশে সব সিটি কর্পোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি অনুমোদিত কুরবানি পশুর হাটগুলোতে বুথ রাখার ব্যবস্থা করেছে। তবে সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক অনুমোদন নেই এমন কোনো হাটে ব্যাংকের বুথ থাকবে না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অনুমোদিত পশুর হাটসমূহে জালনোট সনাক্তকারী মেশিনের সহায়তায় অভিজ্ঞ ক্যাশ কর্মকর্তাদের দ্বারা হাট শুরুর দিন হতে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পশু ব্যবসায়ীদেরকে বিনা খরচে নোট যাচাই সংক্রান্ত সেবা দিতে হবে।

এজন্য তফসিলী ব্যাংকসমূহের তালিকাও তৈরি করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হাটগুলোতে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে মনোনীত কর্মকর্তাদের নাম, পদবী ও মোবাইল নম্বরসহ আপনাদের ব্যাংকের সমন্বয়ক হিসেবে মনোনীত একজন উপযুক্ত কর্মকর্তার নাম, পদবী ও মোবাইল নম্বর আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে ইমেইলে পাঠাতে হবে। ব্যাংকের সমন্বয়কারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট হাটে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের কার্যাদি মনিটরিং করবেন।

অনুমোদিত হাটগুলো যতক্ষণ চলে ততক্ষণ সার্বক্ষণিকভাবে সেবা দিতে হবে। এ জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অনেক হাটে দিনরাত পশু বেচাকেনা হয়। ওইসব হাটে সেবা দিতে হবে। প্রয়োজনে স্থাপন করতে হবে একাধিক বুথ। এ জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলাজনিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পুলিশ বা র‍্যাবের সঙ্গে সমন্বয় করে দিতে হবে।

জাল নোট সনাক্তকরণ বুথে নোট যাচাই সংক্রান্ত সেবা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অবশ্যই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকগুলো দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে ব্যাংকের প্রযোজ্য বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আর্থিক সুযোগ সুবিধা দিতে পারবে।

হাট শুরুর দিন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বুথের কার্যক্রম চলমান থাকবে। বিশেষ করে জেলা বা উপজেলার হাটগুলো নির্দিষ্ট কোন দিনে হয়, ওই দিন ও সময় সমন্বয় করতে হবে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের হাট বসবে ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকে। তার দুই দিন আগে হাটের প্রস্তুতি নিবে ইজারাদার। ব্যাংকগুলোকেও ওই সময় থেকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

কোনো বুথে জাল নোট পাওয়া গেলে সেগুলো ধ্বংস করাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেসব জেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিস রয়েছে সেগুলো সমন্বয় করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা। যেসব জেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা নেই, সেসব জেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখা এটি সমন্বয় করবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার ব্যাংকগুলোকে সোনালী ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুথে ব্যাংকের নামসহ জাল নোট শনাক্ত বুথ লেখা থাকতে হবে। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ফি নেওয়া যাবে না।

এখন থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত প্রতিটি ব্যাংকের সব শাখায় নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ভিডিওচিত্রটি প্রদর্শন করতে হবে। এসব বিষয়ে নেওয়া কার্যক্রমের প্রতিবেদন ঈদের পর ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।

ঢাকা শহরের কোরবানির পশুর হাটগুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনস্ত মিরপুর ও গাবতলী এলাকার হাটে ইসলামী ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ১৭ নং সেক্টরস্থিত বৃন্দাবন হতে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত -স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন এলাকায় – সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক, ভাটারা (সাইদনগর )পশুর হাটে – ব্যাংক এশিয়া ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক,মোহাম্মদপুরের বসিলায় – অগ্রণী ব্যাংক ও দি সিটি ব্যাংক, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক- ই, এফ,জি, এইচ পর্যন্ত এলাকায়-  মিডল্যান্ড ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক দায়িত্ব পালন করবে।

একইভাবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনস্থ উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন আশ-পাশের খালি জায়গায়- এবি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, আমুলিয়া মডেল টাউন এলাকায় – এনসিসি ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক, রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন এলাকা ও লালবাগ এলাকায় – বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকায় – এক্সিম ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, লিটলফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর এলাকায়- এনআরবি ব্যাংক, ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক,ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় – ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক, পোস্তগোলা শশ্মানঘাট সংলগ্ন এলাকায়- রূপালী ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, দনিয়া কলেজ মাঠ ও যাত্রাবাড়ি এলাকায় মধুমতি ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক, মেরাদিয়া বাজার ও খিলগাও এলাকায় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, শশ্রামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায়- জনতা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক, সারুলিয়া পশুর হাটডেমরা এলাকায় ইনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক দায়িত্ব পালন করবে।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.