শেয়ার কারসাজিতে হিরোকে ২ কোটি টাকা জরিমানা!

শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে পুঁজিবাজারের বহুল আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরোকে ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাকে এই জরিমানা করেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

তবে বিএসইসি এ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখেছে। সংস্থাটির কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করছেন না।

সূত্র অনুসারে, বীমা খাতের তিন কোম্পানি এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স ও গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারে নিয়ে কারসাজির দায়ে হিরোকে ওই জরিমানা করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে অবশ্য প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সাফকো স্পিনিং মিলস. হামিদ ফেব্রিকস, মালেক স্পিনিং, ফরচুন সুজ, জেনেক্স ইনফোসিস, ই-জেনারেশন, ন্যাশনাল ফিড মিল, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, সোনালী পেপারসহ এক ডজনেরও বেশি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ আছে। এর মধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পৃথক দুই তদন্তে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও সাফকো স্পিনিং মিলের শেয়ারের কারসাজিতে হিরো ও তার সহযোগীদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। ইতোমধ্যে ডিএসই ওই তদন্ত রিপোর্ট বিএসইসিতে জমা দিয়েছে।

যে তিন কোম্পানির শেয়ার কারসাজির কারণে হিরোকে জরিমানা করা হয়েছে, তার মধ্যে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ৭ মাসে ৬৫৮ শতাংশ বেড়েছিল। ডিএসইতে ২০২০ সালের ২ জুলাই এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ছিল ১৭ টাকা। পরের বছরের ২০ জানুয়ারি তা বেড়ে ১২৭ টাকা ৯০ পয়সায় উঠে। মাত্র সাত মাস সময়ের ব্যবধানে শেয়ারটির দাম বৃদ্ধি পায় ৬৫২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২০ সালের জুন মাস থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়ে ৮৫৯ শতাংশ। গত বছরের (২০২১) এপ্রিল থেকে জুন মাস সময়ে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়ে প্রায় ২০০ শতাংশ।

আলোচিত তিন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘাটনায় হিরোকে জরিমানা করা হলেও বাস্তবে তাকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকরা। কারণ কারাসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে তিনি জরিমানার অনেকগুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অল্প টাকা জরিমানা দিয়ে তিনি কারসাজির দায় থেকে পার পেয়ে যাবেন। বাকী মুনাফা তার কাছেই থেকে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি সত্যিই কারসাজি বন্ধ করার ব্যাপারে আন্তরিক থাকে তাহলে কারসাজির মাধ্যমে যত টাকা মুনাফা করেছে, কমপক্ষে তার দ্বিগুণ জরিমানা করতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষ মূলধনও বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে কারসাজির প্রবণতা কমবে না। কারণ অল্প টাকা জরিমানা দিয়ে পার পাওয়া গেলে কারসাজি না কমে উল্টো বেড়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ধরা যাক,  একজন বিনিয়োগকারী নামের তস্কর কারসাজির মাধ্যমে মুনাফার নামে বাজার থেকে ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই অপরাধে যদি তাকে ২ কোটি জরিমানা করা হয়, তাহলে বাকী ১৮ কোটি টাকা মুনাফা থেকেই যাবে। তাতে নতুন নতুন শেয়ারে কারসাজি করে মুনাফার একটি অংশ দিয়ে হাসি মুখে জরিমানা শোধ করে যাবে।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.