পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়েছি বাংলাদেশও পারে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছেন দেশ ও এর জনগণের জন্য কাজ করতে। কাজেই, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ দিল তিনি তখন সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। যা তারা প্রমাণ করতে পারেনি। দুর্ভাগ্য হলো আমাদের দেশেরই কোন কোন ব্যক্তির প্ররোচনাতেই এটা ঘটে। তবে আমরা নিজস্বে অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়েছি হ্যাঁ, বাংলাদেশও পারে, আমরা পারি। জাতির পিতার তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না,’ বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি।

আজ (২৬ জুন) ‘বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা -২০২২’ এর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর সেগুন বাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকের শিশুরা ভবিষ্যতে এদেশের কর্ণধার হবে। তারাই তো আমার মত প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, শিক্ষক, বড় বড় কর্মকর্তা এবং প্রশাসন ও সংবাদিকতাসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশের উন্নতি করবে। কাজেই, সেইভাবে তারা তৈরী হোক। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তোমাদের চলতে হবে এবং প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যে বিকাশ ঘটছে তারসঙ্গে তাল মিলিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।

শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাদের সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমরা বিজয়ী জাতি এবং বিশ্বে সবসময় মাথা উঁচু করে চলবো, সম্মানের সাথে চলবো। আর এই দেশ আমাদের এ দেশকে আমরা গড়ে তুলবো উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে। আমাদের সোনার ছেলে-মেয়েরা তোমরা তৈরি হও আগামীতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে। সর্বক্ষেত্রেই তোমরা তোমাদের মেধার বিকাশ ঘটাবে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যেন বাংলাদেশ আর পিছিয়ে না থাকে, বাংলাদেশ এগিয়ে যায় এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা আরো উন্নত হয়।

কৃষি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য খাত সহ বিভিন্ন খাতে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, গবেষণাই পারে এক্ষেত্রে পথ দেখাতে। আর আগামীর বাংলাদেশকে আজকের মোধাবীরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ সময় তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদেরকেও এই মেধা অন্বেষণে যুক্ত করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান। কেননা, এদের মধ্যেও বিশেষ প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে এবং এরাও আমাদের সন্তান এবং এবং আপনজন সেই বিবেচনায় এদেরকেও মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। কাজেই, নতুন প্রজন্মকে আমি বলব, সকলকে নিয়ে চল। তবেই আমরা সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

জাতির পিতার বক্তব্য-‘সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই’-এর উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থাৎ সেবার মানসিকতাটা সকলের মাঝে থাকতে হবে। আজকে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে যেখানে যে আছেন, সকলেই মনে রাখবেন আমাদের দেশের যে সম্পদ তার সব কিছুই জনগণের সম্পদ। রোদ, ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলেই তাদের এই অর্জন। কাজেই, তাদের ও এর ওপর সমান অধিকার রয়েছে।

তাঁর সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং বিদ্যুৎ সহ নানা নাগরিক সেবা তৃণমূল পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আধুনিক বিজ্ঞান চর্চা এবং প্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো এবং সেটা আজকের যারা নতুন প্রজন্ম তারাই পারবে। তিনি এই মেধা অন্বেষণকে একটি চমৎকার ব্যবস্থা আখ্যায়িত করে বলেন, এর মাধ্যমে অনেক সুপ্ত প্রতিভা বের হয়ে আসবে যারা আগামীতে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই তাঁর সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্ব দেয় এবং ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৬টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং নভোথিয়েটার প্রতিষ্ঠা করে।

আমাদের ছেলে-মেয়েরা বা নতুন প্রজন্ম প্রযুক্তি বিকাশের এই যুগে জন্ম নেয়ায় প্রাকৃতিকভাবেই অনেক মেধাবী উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের যে সুপ্ত মেধা রয়েছে সেটাকেই আমাদের অন্বেষণ করতে হবে এবং সেটাকেই আগামীর উন্নত বাংলাদেশ গড়ার কাজে ব্যবহার করতে হবে। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার যেন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে তেমনি ছেলে-মেয়েদের আরো ভালভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সুযোগও সৃষ্টি করে দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০০’ প্রণয়ন করলেও পরবর্তী বিএনপি-জামাত জোট সরকার তা বাতিল করে দেয় এবং ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের পর তাঁর সরকার পুণরায় সেই সেই নীতি প্রণয়ন করে এর বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কেননা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির না করে কাজ করলে কখনো সাফল্য পাওয়া যায় না।

জাতির পিতার করে যাওয়া ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ এবং সেই পদাংক অনুসরণ করে তাঁর সরকারের ১৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয় জাতীয়করণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- কৃষি, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সাইন্সেস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসা, ডিজিটাল, ইসলামি-আরবি, টেক্সটাইল, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও এরোস্পেস, বেসরকারি ফ্যাশন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.