পদ্মা সেতু উদ্বোধন: সভামঞ্চে প্রধানমন্ত্রী

বহুল প্রত্যাশিত ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু আজ উন্মুক্ত হবে আজ। যা রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরের সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক অগ্রগতি বয়ে আনবে। সেটি উদ্বোধন করতে এরই মধ্যে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের মঞ্চে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৫ জুন) সকাল ১০টায় মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে পৌঁছান তিনি ।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এই সুধী সমাবেশ থেকেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরি ঘাটে তা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে দুপুর ১২টার পর সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও ভোর থেকেই এখানে ভিড় জমিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লাখো মানুষ।

সমাবেশস্থলে ১০ লাখ মানুষের জমায়েত হওয়ার আশা করছে আওয়ামী লীগ। পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি অনুষ্ঠানের মঞ্চটি ১১টি পিলারের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। মঞ্চ থেকে প্রায় ২০ ফুট দূরে নৌকা দিয়ে একটি নদীর আদল তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চের চারপাশ ঘিরে রয়েছেন পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের প্রশাসনের লোকজন। বাঁশ দিয়ে পুরো এলাকায় বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। সভার প্রথম স্তরে বিশেষ ব্যক্তিরা ছাড়া কেউ যেতে পারবেন না। মাঠজুড়ে বসানো হয়েছে মনিটর। এলাকাজুড়ে মাইক। গতকাল বিকেলে মঞ্চের মাইক পরীক্ষা করা হয়। পুরো এলাকা রেকি করেছেন পুলিশ, সেনা বাহিনীর সদস্য, র‌্যাব, নৌ পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

এদিকে জনসভার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাবাজার ঘাটের ও আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য কাজ করছেন। তারা ১০ ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছেন আগতদের। এছাড়াও সমাবেশ ঘিরে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সমাবেশস্থলের প্রবেশমুখ আর্চওয়ে দিয়ে নিরাপত্তা তল্লাশি করে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে নেতাকর্মীদের।

দেশের বৃহত্তম স্ব-অর্থায়নকৃত মেগা প্রকল্পের জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির সময়সূচী অনুযায়ী মাওয়া পয়েন্টে সকাল ১১টায় তিনি স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শীট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে ১.২ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সকাল ১১টা ১২ মিনিটে মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন। তিনি সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন।

প্রধানমন্ত্রী সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন তিনি। দুপুর ১২টায় মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত দলের জনসভায় যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বিকেল সাড়ে ৫টায় হেলিকপ্টারে জাজিরা পয়েন্ট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মান কাজে ৩৭ এবং ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর অংশ দৃশ্যমান হয়। পরে একের পর এক ৪২টি পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১টি স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে বহুমুখী ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ কাঠামো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, মূল সেতু নির্মাণের কাজটি করেছে চীনের ঠিকাদার কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদী শাসন করেছে চীনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। মোট ৩০, ১৯৩৩.৭ কোটি টাকা ব্যয়ে স্ব-অর্থায়নে সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

মূল সেতু নির্মাণের ব্যয় ১২,১৩৩.৩৯ কোটি টাকা (৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার এবং গ্যাস লাইনের জন্য ১০০০ কোটি টাকা সহ) এবং ১৩.৮ কিলোমিটার নদী শাসন কাজের ব্যয় ৯,৪০০০.০ কোটি টাকা। টোল প্লাজা এবং এসএ-২ সহ ১২ কিমি অ্যাপ্রোচ রোডের নির্মাণ ব্যয় ১,৯০৭.৬৮ কোটি টাকা (২টি টোল প্লাজা, ২টি থানা ভবন এবং ৩টি পরিষেবা এলাকা সহ) যেখানে পুনর্বাসনের ব্যয় ১,৫১৫.০০ কোটি টাকা, ২৬৯৩.২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় ব্যয় ১২৯০.৩ কোটি টাকা, কনসালটেন্সি ৬৭৮৩.৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য (বেতন, পরিবহন, সিডি ভ্যাট এবং ট্যাক্স, ফিজিক্যাল এবং প্রাইস কন্টিনজেন্সি, ইন্টারেস্ট ইত্যাদি) ১,৭৩১.১৭ টাকা। শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয় ২০১৭ সালের ৭ অক্টোবর।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.