দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে গতি সঞ্চার হয়েছে, তা ধরে রাখতে হলে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন। ব্যাংকভিত্তিক প্রচলিত অর্থায়ন ব্যবস্থায় বিনিয়োগের এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মাধ্যমে একে বিনিয়োগের অর্থ যোগানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎসে পরিণত করা সম্ভব। আর এ কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য পর্যাপ্ত নীতিসহায়তা থাকা প্রয়োজন।
পু্ঁজিবাজারে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্রোকারহাউজ রয়্যাল ক্যাপিটাল আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আলোচকরা এ কথা বলেছেন।
এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা-সিওও সাইফুর রহমান মজুমদার এফসিএমএ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামোর মধ্যেই অন্যান্য খাতের বরাদ্দকে ব্যাহত না করেও পুঁজিবাজারের জন্য পর্যাপ্ত নীতি-সহায়তা দেওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের গুণগত সম্প্রসারণের মাধ্যমে মুদ্রাবাজারের নানা অসঙ্গতিও দূর করা সম্ভব। আর পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজার ভাল পারফর্ম করলে সামগ্রিক অর্থনীতিও ভাল পারফর্ম করবে।
মঙ্গলবার (২১ জুন) রাতে অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রয়্যাল ক্যাপিটালের হেড অব রিসার্চ আক্রামুল আলম।
এতে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুবর্ণ বড়ুয়া, অধ্যাপক সজিব হোসেন, ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের সভাপতি ও অর্থসূচকের সম্পাদক জিয়াউর রহমান এবং সন্ধানী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আরিফুল ইসলাম।
ওয়েবিনারে সুবর্ণ বড়ুয়া বলেন, এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরাসরি পদক্ষেপ কম। এছাড়াও বাজেট ঘাটতি মেটাতে যে এক লাখ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংকঋণের কথা বলা হয়েছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যাবে।
তিনি বলেন, বাজেটে করপোরেট কর কমানো হলেও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আগাম করের হার। তাতে যতটুকু করছাড় পাবে কোম্পানিগুলো, কর বাবদ তারচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হবে।
অধ্যাপক সজিব হোসেন বলেন, বাজেট নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যৌক্তিক মূল্যে ভাল শেয়ার কেনা গেলে লোকসানের ঝুঁকি থাকবে না। কারণ কোনো বাজার যেমন টানা বুলিশ থাকে না, তেমনই টানা বিয়ারিশও থাকে না। তাই বিয়ারিশ মার্কেটে শেয়ার কিনে বুলিশ মার্কেটের জন্য অপেক্ষা করলে নিশ্চিত লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকে।
জিয়াউর রহমান বলেন, সরকার তার বাজেট ঘাটতি পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোড করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। তাতে ব্যাংকিং খাত থেকে কিছুটা কম ঋণ নিলেও চলবে। ফলে ব্যাংক থেকে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ বাড়বে।
তিনি বলেন, একটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে নানা কমপ্লায়েন্স পরিপালন করতে হয়। এতে কোম্পানির পরিচাল ব্যয় বেড়ে যায়। কোম্পানির উপর নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বেড়ে যায় বলে কর ফাঁকি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আকর্ষণীয় কর সুবিধা না পেলে ভাল কোম্পানিগুলো আইপিওতে আসতে আগ্রহী হয় না। এ কারণে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়িয়ে কমপক্ষে ১০ শতাংশ করতে হবে।
মীর আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগে কিছু কর সুবিধা আছে, কিন্তু বে-মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডে এই সুবিধা নেই। বে-মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডেও একই সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।
অর্থসূচক



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.