দেশে বিদ্যমান মানিলন্ডারিং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার অর্থ হলো অন্যায়কে স্বীকৃতি দেওয়া। এবারের বাজেটে ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাবটি বাতিলের আহবান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ।
আজ (১৮ জুন ) এফডিসিতে করোনার অভিঘাত উত্তরণে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’।
এ সময় ড. নাজনীন বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে ডলারের উপর বোঝা না বাড়িয়ে ঘাটতি বাজেট পূরণে দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। করোনা অভিঘাত উত্তরণে অন্তত পরবর্তী এক বছর বিদ্যুতের মূল্য অপরিবর্তিত রাখা উচিত। বিদ্যুৎ-গ্যাস-তেলের মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ জনগণের উপর চাপ তৈরি করে।
অনুষ্ঠানে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমাদের মতো দেশের বাজেট বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ব্যয় বৃদ্ধি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশে যাতে শ্রীলঙ্কার মতো কোন শ্বেতহস্তী প্রকল্প তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
তিনি আরো বলেন, এবারের বাজেটে শুধুমাত্র ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ রেখে অর্থ পাচারকারীদের স্বার্থ দেখা হয়েছে। এতে মনে হতে পারে সামান্য কর গ্রহণের মাধ্যমে অর্থপাচারকারীদের দায়মুক্তি সনদ দেয়া হচ্ছে। আমরা জানি না আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অজুহাতে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার নামে কাদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে তা বুঝতে আমাদের আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। বাজেটে প্রতি বছর ঘাটতির পরিমাণ বেড়েই চলছে। ঘাটতি বাজেট পূরণে সরকার যদি আভ্যন্তরীণ ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ গ্রহণ করে তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হওয়ার শংকা রয়েছে। অন্যদিকে সরকার প্রস্তাবিত বাজেটে বৈদেশিক উৎস থেকে কম বেশি ১১ বিলিয়ন ডলার ঋণ আনার কথা ভাবছে। অথচ দুই বছর আগেও বৈদেশিক উৎস থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ বিলিয়ন ডলার। বিদেশি ঋণ বৃদ্ধির এই চিত্র আমাদের জন্য সুখকর নয়।
ছায়া সংসদের প্রতিযোগিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। এতে মক স্পিকার হিসেবে সভাপতিত্ব করেন ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। এছাড়া ছায়া সংসদে বিচারক হিসেবে ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাইনুল আলম, সাংবাদিক শারমীন রিনভী, সাংবাদিক জাহিদ রহমান ও সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা।
উল্লেখ্য, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক-এর পৃষ্ঠপোষকতায় বিজয়ী দলকে ট্রফি প্রদান করছে ইউএনডিপি বাংলাদেশ’র কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। এছাড়া অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
অর্থসূচক/এইচডি



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.