স্টোকস-বেয়ারস্টোর ঝড়ে ইংল্যান্ডের ইতিহাস

নটিংহ্যামের শেষটা দিনটা রোমাঞ্চের হবে, চতুর্থ দিনের খেলা শেষে এমনটাই বলেছিলেন টেন্ট্র বোল্ট। যেই কথা সেই যেন কাজ। নটিংহ্যামের শেষ দিনের শেষ সেশনটার পুরোটা মোড়ানো ছিল রোমাঞ্চে। দিনের শেষ সেশনে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৬০ রান। তাতে ড্রয়ের পথেই হাঁটছিল সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। তবে চা বিরতি থেকে ফিরে দৃশ্যপট পাল্টে দেন জনি বেয়ারস্টো। টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার সঙ্গে ড্র হতে যাওয়া ম্যাচে ইংল্যান্ডকে জেতাতে ডানহাতি এই ব্যাটার। আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে বেয়ারস্টোকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছেন অধিনায়ক বেন স্টোকস। নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেন্ট্র ব্রিজে সবচেয়ে বেশি ২৯৯ রান তাড়ার রেকর্ড গড়লো ইংল্যান্ড। এর আগে নটিংহ্যামে ২৮৪ রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল ইংলিশরা। সেই সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নিলো ব্রেন্ডন ম্যাককালামের শিষ্যরা।

টেন্ট্র ব্রিজে জয়ের জন্য ২৯৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডকে পারফেক্ট শুরুর আভাস দেন অ্যালেক্স লিস। টিম সাউদির করা ইনিংসের প্রথম দুই বলে টানা দুই চার মেরে বড় রান তাড়া শুরু করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। সেই ওভারের চতুর্থ বলে আরও একটা চার মেরেছিলেন লিস। তবে আরেক ওপেনার জ্যাক ক্রলির শুরুটা ছিল একেবারে ভিন্ন। বোল্টের ফুলার ডেলিভারিতে সেকেন্ড স্লিপে থাকা সাউদিকে ক্যাচ দিয়ে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করে সাজঘরে ফেরেন ক্রলি। প্রথম ইনিংসে মাত্র চার রানে আউট হওয়া ক্রলি এদিন ফিরেছেন শূন্য রানে। উইকেট হারালেও লিসের আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ের লাগাম টেনে ধরতে পারেননি নিউজিল্যান্ডের বোলাররা। বরং একের পর এক বাউন্ডারিতে কিউইদের চাপে রাখেন লিস।

বাঁহাতি এই ওপেনারকে দারুণভাবে সঙ্গ দিলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি ওলি পোপ। ম্যাট হেনরির অ্যারো স্ট্রেইট লাইনস ডেলিভারিতে উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার। যদিও আরও আগেই ফিরতে পারতেন পোপ। বোল্টের আউটসুইং ডেলিভারিতে এজ হলেও স্লিপে দাঁড়িয়ে ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি টম লাথাম। পরের ওভারে জো রুটকে ফেরান বোল্ট। বাঁহাতি এই পেসারের দুর্দান্ত এক আউটসুইংয়ে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটেন রুট। প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রান করা রুট এদিন ফিরেছেন মাত্র ৩ রানে। এরপর দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরির পথে হাঁটলেও তাকে সেটি করতে দেননি সাউদি। ডানহাতি এই পেসারের আউট সাইড অফ স্টাম্পের লেংথ ডেলিভারিতে ব্লান্ডেলের গ্লাভস বন্দি হয়েছেন লিস। বাঁহাতি এই ব্যাটারে খেলেছেন ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস।

এর পরের গল্পটা কেবলই স্টোকস ও বেয়ারস্টোর। ব্রেসওয়েলের বলে এক রান নিয়ে ব্যক্তিগত রানের খাতা খুললেও পরের ওভারে সাউদির বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মারেন স্টোকস। এরপর ৪৩ রানে অপরাজিত থাকা বেয়ারস্টোকে সঙ্গে নিয়ে চা বিরতি চান ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক। দ্বিতীয় সেশনে খানিকটা দেখেশুনে ব্যাটিং করলেও চা বিরতি থেকে ফিরতেই বদলে যায় দৃশ্যপট।

শেষ সেশনের প্রথম ওভার থেকেই কিউই বোলারদের ওপর চড়াও হন বেয়ারস্টো। তিন চারে হেনরির ওভার থেকে আসে ১৩ রান। এক ছক্কা ও এক চারে বোল্টের ওভার থেকেও এসেছে ১৩ রান। আগের ওভারে ১৩ রান নেয়া হেনরির ওপর আরও খানিকটা চড়াও হন বেয়ারস্টো। সেই ওভার থেকে আসে ১৭ রান। তাতে তৃতীয় সেশনের প্রথম তিন ওভারে আসে ৪৩ রান। এরপর আর থামেনি বেয়ারস্টো-স্টোকসের টি-টোয়েন্টি মেজাজের ব্যাটিং।

একের পর এক চার ছক্কায় কিউই বোলারদের ওপর রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন তারা দুজন। শেষ ৩৮ ওভারে ১৬০ রান প্রয়োজন হলেও তৃতীয় সেশনের প্রথম ৯ ওভারেই ১০২ রান তোলেন বেয়ারস্টো-স্টোকস। এর মাঝে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বেয়ারস্টো। সাউদির বলে চার মেরে মাত্র ৭৭ বলে সেঞ্চুরি পূর্ন করেন ডানহাতি এই ব্যাটার। বেয়ারস্টোর অনবদ্য ইনিংস থামান বোল্ট। বাঁহাতি এই পেসারের বলে ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ১৩৬ রান করা বেয়ারস্টো। এরপর অবশ্য বেন ফোকসকে সঙ্গে নিয়ে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন। ১২ রানে অপরাজিত থাকেন ফোকস আর বোল্টের বলে চার মেরে ম্যাচ জেতানো স্টোকস অপরাজিত থাকেন ৭৫ রানে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন বোল্ট।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.