বাজেট ২০২২-২৩: পুঁজিবাজারে চারে চার

ফের টানা দর পতনে দেশের পুঁজিবাজার। আজ নিয়ে পর পর চার দিন সূচক কমেছে এই বাজারে। এর মধ্যে তিনদিন সূচক পড়েছে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজেটে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশার প্রতিফলন না হওয়ায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে বাজেট ঘোষণার পর থেকেই বাজারের গতিধারা নিম্নমুখী। আর বৃহস্পতিবার (৯ জন) বাজারে দরপতন হয়েছে বাজেট সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ও স্নায়ুর চাপে।

তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, অনেকটা মনস্তাত্ত্বিক কারণে বাজারে দর পতন হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বাজেট নিয়ে এতটা হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ কিছু নেই, এটি যেমন সত্য, তেমনই সত্য হচ্ছে-বিদ্যমান কোনো সুবিধা কমানো হয়নি, বাড়ানো হয়নি করের হার। তাদের মতে, বাজেটকেন্দ্রীক হতাশার সাথে বিশ্বজুড়ে উচ্চমূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দার আশংকা, আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে বড় দর পতনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও দরপতনে ভূমিকা রাখছে।

উল্লেখ, গত ৯ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে আগামী ২০২২-২৩অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। ঘোষিত বাজেট নিয়ে স্টেকহোল্ডাররা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এদের মধ্যে পুঁজিবাজারের একটি বড় অংশ বাজেট নিয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের বেশিরভাগ দাবি বা প্রস্তাবই প্রতিফলিত হয়নি। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জও (সিএসই) প্রায় অভিন্ন বক্তব্য রেখেছে। সিএসই পুঁজিবাজারে গতিশীলতার স্বার্থে এই বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) সাদা করার সুযোগের মেয়াদ আগামী অর্থবছর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে।

মূলত: বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না রাখার বিষয়টি-ই বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে বেশি। তাদের মতে, উচ্চমূল্যস্ফীতি, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লাগাম টেনে রাখা, রেপোর সুদ হার বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বাজারে এক ধরনের তারল্য সংকট চলছে।কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকলে তা তারল্য সংকট কিছুটা লাঘব করতে পারতো। যদিও এই সুযোগের আওতায় অতীতে পুঁজিবাজারে খুব একটা বিনিয়োগ আসেনি, তবুও বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে।

ডিএসইর পরিসংখ্যান অনুসারে, গত চারদিনে এই স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ১২২ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট কমেছে। পরের তিন দিন সূচকটি কমেছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট, ৪৮ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট, ৩৯ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট ও ৩০ দশমিক ৬০ পয়েন্ট কমেছে। এই সময়ে সূচকটি ৬ হাজার ৬৮৪ দশমিক ২৪ পয়েন্ট থেকে ৬ হাজার ৩৬১ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে নেমেছে।

তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে, বাজেট ঘোষণার দিন থেকে পর পর দুই দিন বাজারে লেনদেন কমলেও পরের দুই দিনে তা বেড়েছে। গত ৮ জুন ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৯১৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বাজেট ঘোষণার দিন (৯ জুন) তা কমে ৭৫৮ কোটি ২৬ লাখ টাকায় নেমে আসে। পরদিন তা আরও কমে দাঁড়ায় ৬৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে সোমবার থেকে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা উর্ধমুখী। সোমবার ডিএসইতে ৭৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। আর মঙ্গলবার তা ৮শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ৮৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

 

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.