বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারকে আগামী চার বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ দিয়েছে সরকার। শনিবার(১১ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী ৪ জুলাই থেকে অথবা যোগদানের তারিখ থেকে চার বছরের জন্য তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত মোতাবেক বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গ্রহণ করবেন।

বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদ শেষে দায়িত্ব নেবেন আব্দুর রউফ তালুকদার। বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা রউফ সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন সচিবালয় ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে। দেড় যুগ আগে সচিবালয় ক্যাডার বিলুপ্ত করে তাকে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করা হয়। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুরে প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) হিসেবেও কাজ করেছেন এই কর্মকর্তা। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থনীতির ওপর কর্মশালায় অংশ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করেন।

২০১৮ সালের ১৭ জুলাই অর্থসচিব হিসেবে নিয়োগ পান রউফ তালুকদার। এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্বে আসেন। তার আগে তিনি এই বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, উপসচিব ও যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থ বিভাগের বিভিন্ন পদ ছাড়াও রউফ শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিবের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে আব্দুর রউফের। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব ছিলেন তিনি।

আব্দুর রউফ তালুকদার ১৯৬৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলাধীন তারাকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে এমএসসি ডিগ্রি নেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। এর পরদিন ১৬ মার্চ সাবেক অর্থসচিব ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পদে নিয়োগ দেয় সরকার। পরে ২০ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকে ১১তম গভর্নর হিসেবে যোগদান করেন ফজলে কবির। সে হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার।

ওই সময় এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারে চার বছরের জন্য কাউকে গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা থাকলেও সরকার এ মেয়াদ আরেক দফা বাড়াতে পারে। যা ওই বছর ৩ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরপর গভর্নর পদের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছর বয়স করে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করা হয়। সেই হিসাবে ২০২২ সালের ৩ জুলাই তার মেয়াদ শেষ হবে।

হিসাব করে দেখা যায়, প্রথম দফায় ৪ বছর, দ্বিতীয় দফায় ৩ মাস ১৩ দিন এবং তৃতীয় দফায় ১ বছর ১১ মাস ১৫ দিন অর্থাৎ মোট ৬ বছর ৩ মাস গভর্নর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখেছেন ফজলে কবির।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.